সমাজ যে সুন্দরের পথে অনেকদূর এগিয়েছে তা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে প্রার্থী হওয়ার মধ্যদিয়েই ফুটে উঠেছে। তিনি শুধু প্রার্থীই হননি নির্বাচিতও হয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতির সংখ্যা এবং অবাদ সুষ্ঠু তথা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তৃতীয় লিঙ্গের একজনের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সংগ্রাম এবং তার সুযোগ দেয়াটাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায় না।
সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই হিজড়াদের নানা গঞ্জনা অপমান সহ্য করতে হয়েছে। বাধ্য হয়েই বেঁেচ থাকার জন্য সঙ্গবদ্ধ থেকেছে। অথচ, ওরা যে মানুষ, কারো না কারো সন্তান তা সমাজের অনেকেই ভুলে যান বেমালুম। কোন পিতা-মাতাই চান না সন্তান অস্বাভাবিক হোক। কোনো কোনো সন্তান বেড়ে ওঠার সাথে শরীর আর মনের দিক দিয়ে দিয়ে অন্যটা যখন টের পায় তখন তার কি করার থাকে? বিদ্যালয়ে, পাড়ায় মহল্লায় এমনকি নিজের বাড়িতেও তাকে নিগৃহীয় হত হয়। বাধ্য হয়েই এক সময় সে ছুটে যায় হিজড়া পল্লি কিম্বা অন্য কোনোস্থানে। ছেলে নাচিয়ে এর ওর কাছে হাত পেতে চলতে হয়। এমনটি কি হওয়া উচিত? অবশ্যই না। তাকে ছেলে কিম্বা মেয়ে ভাবার আগে আমরা কিছুতেই যেন মানুষ ভাবতে পারি না। এই সমাজে কোটচাঁদপুরের পিংকি নিজেকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছেন, নিজেকে করতে পেরেছেন জনপ্রতিনিধি। এটা নিশ্চয় কম নয়। পিংকি ও পিংকির সমাজ অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার দাবি রাখে।
পিংকিই প্রথম দেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনপ্রতিনিধি। এটা যেমন তার জন্য গৌরবের, তেমনই এখন তার দায়িত্বও অনেক। যে মানুষ তার কাজের মধ্যদিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তার ওপর দায়িত্বের মাত্রাও বহুগুণ বেড়ে যায়। পিংকি নিশ্চয় তার স্বচ্ছ দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতার মধ্যদিয়ে সকলকে বুঝিয়ে দিতে পারবে তৃতীয় লিঙ্গের কোনো মানুষই অন্যদের তুলনায় কম নয়। এটা করতে পারলে সমাজের অগ্রযাত্রাও তরান্বিত হবে।