চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ-মোটরসাইকেল আরোহীর ধস্তাধস্তি মারপিট : পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশের অভিযান চলাকালে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সাথে মোটরসাইকেল আরোহীর ধস্তাধস্তিই শুধু হয়নি, মোটরসাইকেল চালককে লাঠি দিয়ে পিটুনিরও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মোটরসাইকেল চালক চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার সুভাষ কুমারকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে গতকালই তার সহকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সাথে বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে। পুলিশ সুপার দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে পুলিশ লাইনের সামনে ট্রাফিক পুলিশ মোটরযান অধ্যাদেশের আওতায় যানবাহন ও চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করা শুরু করেন। এসময় ১০টি মোটরসাইকেল ৩৮টি বাস, ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। হেলমেট না থাকার কারণেও মামলা রুজু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার দামুড়হুদা অভিমুখে যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকেও থামায়। এক পর্যায়ে স্টেনোগ্রাফার সুভাষ কুমার ও তার সাথে থাকা দামুড়হুদা সহকারী জজ আদালতের অফিস সহকারী রাহাতুল ইসলামের সাথে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই আমিরুল ইসলামের বাগবিত-া শুরু হয়। এ সময় সার্জেন্ট নবাব মোবাইলফোনে ভিডিও রেকর্ড শুরু করেন। মোবাইলফোন ফেলে দেয়াসহ উভয়পক্ষের শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। স্টেনোগ্রাফার সুভাষ কুমার বলেছেন, আমি যথযথভাবে আইন মেনেই নিজের কাজে ভেমরুল্লাহ যাচ্ছিলাম। পুলিশ লাইনের সামনে ট্রাফিক পুলিশ থামতে বলে। যথযথভাবে মোটরসাইকেল থামালে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নবাব ও টিএসআই আমিরুল ইসলাম আপত্তিকর কথা বলতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার খারাপ আচরণের প্রতিবাদ করি। তখনই আমাকে পুলিশ লাইনে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করা হয়। ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়েও আমাকে মারা হয়। ওই সময় আমাকে মাদকসহ মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি সহকর্মীরা জানার পর সাথে সাথে পদস্থ কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ওসমান গণি আমাকে উদ্ধার করেন। এরপর আমি অফিসে এসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। এরপর অবগত করানো হয় পুলিশ সুপারকে। পুলিশ সুপার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। পক্ষান্তরে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নবাব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, মোটরযান অধ্যাদেশের আওতায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পুলিশ লাইনের সামনে অভিযান শুরু করি। এ সময় যেসব মোটরসাইকেল চালকের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজ পাওয়া যায়নি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থাকি। অথচ একজন আমাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান। অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকেন। রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চালনোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি টিএসআই আমিরুলের সাথে উগ্র আচরণ শুরু করেন। এ ঘটনা আমি দেখার পর তা মোবাইলে ধারণ করতে গেলে তিনি আমার ওপর চড়াও হন। আমার হাত থেকে মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। ধস্তাধস্তি করে আমার ও আমার সঙ্গীয় ফোর্সের ওপর চড়াও হন। এতে পুলিশের দু সদস্য আহত হন। এ সময় পুলিশ লাইন থেকে কিছু ফোর্স বের হয়ে আসে। স্থানীয় লোকজন ও এসএফএর কিছু সদস্য তাকে থামান। স্টেনোগ্রাফার সুভাষ কুমারকে মারধর প্রসঙ্গে নবাব বলেন, স্থানীয় লোকজন ও এসএফএর সদস্যরা তাকে মারধর করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলের বিষয়ে স্টেনোগ্রাফার সুভাষ কুমারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ নিজেদের অন্যায় আড়াল করার জন্য বানোয়াট অভিযোগ তুলেছে। আমি চুয়াডাঙ্গা-ল-১১-৪০৭৮ নম্বর মোটরসাইকেল নিয়েই যাচ্ছিলাম।