আলমডাঙ্গার রেলওয়ের জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে না আজ

দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় রেলওয়ের জমিতে গড়ে তোলা প্রায় ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার অভিযানে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়া হবে না-কি কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে? এলাকাবাসীর মনে এখন এমন প্রশ্নের দোলাচল। বিশেষ করে অভিযানের দুদিন আগে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের প্রতিনিধি দলের চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ ও পাকশী গিয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অফিসে যোগাযোগ করার ঘটনা এবং পাকশী অফিস থেকে আসা ম্যাজিস্ট্রেটের ২ শতাধিক চিহ্নিত অবৈধ স্থাপনার ভেতর মাত্র কয়েকজন দরিদ্র ব্যবসায়ীর দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী এ অভিযানের ন্যায্যতা ও সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কানুনগো জানালেন আজ মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে না, ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গায় রেলওয়ের জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কুমার নদের দুপাশে এ অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সারাদেশে অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করে রেলওয়ের সম্পত্তি উদ্ধারের জোর অভিযান শুরু হয়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে এ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। প্রভাবশালীদের বড় বড় স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে রেলওয়ের সম্পত্তি উদ্ধারের ঘটনা দেশবাসীর মনে আশা জাগিয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে আলমডাঙ্গায় গত বৃহস্পতিবার অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান করা হয়। করা হয় মাইকিং। ভেঙে ফেলার জন্য স্থাপনা নির্দিষ্ট করে লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। আজ মঙ্গলবার ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পূর্ব নির্ধারিত দিনক্ষণ। আলমডাঙ্গায় রেলওয়ের জমিতে অবস্থিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সংবাদে সাধারণ মানুষ বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন। দেরিতে হলেও সরকারের এ শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
কিন্তু রেলওয়ের এ উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। তাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে যে, এ উচ্ছেদ অভিযানে চিহ্নিত সকল স্থাপনায় উচ্ছেদ করা হবে? না-কি কয়েকটি ছোট স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন করা হবে?
এ সব প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। গত বৃহস্পতিবার রেলওয়ে কর্তৃক আলমডাঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নোটিশ প্রদানের পর গত বুধবার অবৈধ দখলদারদের প্রতিনিধি দলের রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদাহ ও পাকশী অফিসে যাতায়াত, অভিযানের আগের দিন অর্থাৎ গতকাল সোমবার রেলওয়ের পাকশী অফিস থেকে আলমডাঙ্গায় আসা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুজ্জামানের কথাবার্তা ও আচরণে মানুষের মনে সন্দেহ আরও বেশি দানা বাঁধে। নূরুজ্জামান রেলওয়ের পশ্চিমের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনি গতকাল একটি টিম নিয়ে আলমডাঙ্গায় যান। উচ্ছেদের জন্য পূর্ব নির্ধারিত প্রায় ২ শতাধিক স্থাপনার ভেতর লালব্রিজের নীচে অবস্থিত মাত্র কয়েকটি দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। এতে উচ্ছেদ অভিযানের সার্বজনীনতা ও ন্যায্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। প্রভাবশালীদের বড় বড় স্থাপনা রেখে লালব্রিজের নীচের মাত্র কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থাপনা ভেঙে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন করার চক্রান্ত হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আলমডাঙ্গায় অবৈধ স্থাপনা পরিদর্শনকালে গতকাল নূরুজ্জামান বলেন, বড় বড় শহরে রেলওয়ের জমি দখল করে হাত বদলের মাধ্যমে অনেকে ৮-১০ লাখ কামিয়ে নেন। কিন্তু আলমডাঙ্গার মানুষ এমন নন। তারা দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে নিজেরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি আরও বলেন, তিনি জানতেন না যে আলমডাঙ্গায় এত ঘর আছে (অবৈধ স্থাপনা)। তার যে কোন একটা কাগজ চায় যার বলে তারা এ সম্পত্তি ভোগ করতে পারে। এক বছরের অনুমতি থাকলেও তো বল থাকে যে এক বছরের টাকা দিয়েছি।
ম্যাজিস্ট্রেট নূরুজ্জামানের এমন রহস্যজনক বক্তব্যও জনমনে এ অভিযানের সাফল্য নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি এমনটিই অভিযোগ করেছেন।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমের প্রধান (ভূসম্পত্তি) ড. আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রেসপন্স করেননি। ম্যাজিস্ট্রেট নূরুজ্জামানের সাথে আলমডাঙ্গায় যান পাকশী রেলওয়ের কানুনগো রাজীবুজ্জামান। তিনি বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কিছু মাস্টার প্ল্যান আছে। তার ওপর ভিত্তি করে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কিছু সম্পত্তি বৈধ প্রক্রিয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লিজ প্রদান করেছে। সেখানে কিছু অবৈধ দখলদার আছে। তাদেরকে উচ্ছেদের আবেদন পেয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওখানে অনেকে দখল করে আছেন। কিছু এলাকা ওয়াবদার। জেলাপ্রশাসনও কিছু কিছু দাবি করেছে। এদের মধ্যে কিছু বৈধ লীজের কাগজপত্র আছে। এরা অনেকে জানেন না যে কোথা থেকে বৈধভাবে লীজ নিতে হয়। সে কারণে স্যার (ম্যাজিস্ট্রেট ১৫ দিন সময় দিয়েছেন, যাতে লীজ বৈধকরণ করতে পারেন কিংবা লীজ হালনাগাদ করতে পারেন। তিনি বলেন, লালব্রিজের নীচে অর্থাৎ রেলওয়ের নীচে। এখানে কোনোভাবেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার নেই।