প্রসঙ্গঃ প্রকাশ্যে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি

ব্যস্ততম সড়কে, জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে হুট করে এসে চট করে মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়া অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রেলওয়ে স্টেশনে রেলগাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে রেলভ্রমণকারীর মালামাল হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা তো অনেকটা গাসওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দর্শনা হল্ট স্টেশনে প্রতিদিনই ঘটছে এ ঘটনা। অথচ ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া তেমন কেউই আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের উদাসিনতাও চরম থেকে চরমে পৌঁচাচ্ছে। ব্যাপকতা পেয়েছে ছিনতাই। অবস্থা দৃষ্টে প্রতিকারের আশাও এখন অবান্তর।
এক সময় নির্জন সড়কে ঘাপটি মেরে থাকা ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য ছিলো। পুলিশি তৎপরতায় তাতে কিছুটা ভাটা পড়লেও প্রকাশ্যে ছিনতাইকারী চক্র যেনো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত যশোরের ব্যস্ততম সড়কে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ছবিসহ প্রতিবেদনে যে বর্ণনা উঠে এসেছে তা জেনে বিশ্বাস করা কঠিন, যে যশোরে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু আছে। মোটরসাইকেলযোগে হুটকরে এসে পথচারীদের গায়ে তথা গয়না বা কাছে থাকা টাকাসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা যশোরে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে বলে অভিযোগ। অভিযোগটি সামনে এসেছে যখন সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছিনতাইয়ের দৃশ্য সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিষয়টি নিশ্চয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের পদস্থ কর্মকর্তাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরপরও কি যশোরকে ছিনতাইকারিমুক্ত করা যাবে? সঙ্গত এ প্রশ্নের পাশাপাশি সম্পূরক আরো কিছু প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। তা হলো- দর্শনা হল্টস্টেশনে ট্রেন ছাড়ার মুহুর্তে যাত্রীদের মালামাল ছিনতাই এবং এ বিষয়ে পুলিশে নালিশ না করা প্রসঙ্গ।
দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের সদস্য এবং আইন প্রয়োগে সরঞ্জমাদিতে অপ্রতুলতা অস্বীকার করা যায় না। শত অপ্রতুলতার পরও পুলিশ ও র‌্যাব যে পারে তার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পারে না, কিছু কিছু ঘটনা জানেও না। কেনো? কারণ অপরাধপ্রবণতা রুখতে সমাজের সচেতনমহলের দায়িত্বহীনতা। ছিনতাইয়ের শিকার হলেন অথচ তিনি পুলিশে নালিশ করলেন না। মামলা করে বিচার চাওয়াকে ঝামেলা মনে করে সেদিক থেকে মুখ ফেরানো মানে অপরাধীদের অপরাধ কর্মকা-কে কি উষ্কে দেয়া নয়? অনেকের দৃষ্টিতে প্রশ্নটি সমাজের বাস্তবতায় অবিবেচকও বটে। যেমন দর্শনা হল্ট স্টেশনে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে উঠে ট্রেনটি ঠিক ছাড়ার মুহূর্তে যারা ছিনতাইয়ের শিকার হন তাদের অধিকাংশই ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বাড়ি ফেরার জন্য উম্মত্ত থাকেন। রেলস্টেশনে বা রেলগাড়ি বা রেলওয়ের জমিতে কোন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে রেলওয়ে পুলিশের কাছেই নালিশ করতে হয়। চলন্ত ট্রেন থেকে ঘটনাস্থল স্টেশনে নামার সুযোগ থাকে না, তেমনই রেলওয়ে পুলিশের থানাও অনেক দূরে। আশে পাশের মধ্যে পোড়াদহে।
জনগণের যান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যখন আইন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একাধিক সংস্থা বিদ্যমান, তখন অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। রাস্তা ঘাটে স্টেশনে ট্রেনে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পরও কেনো পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে না তা যেমন খতিয়ে দেখা দরকার, তেমনই ছিনতাইয়ের ঘটনা কেনো ব্যপকতা পেলে তাও বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশে জটিলতলা দূর করতে হবে। কর্মরত কর্তাদের কর্তব্যপরায়নতায় অর্জন করতে হবে আস্থা। সুন্দর সমাজ গঠনে সর্বস্তরের সকলকে হবে সোচ্চার।