গাংনীর কষবা গ্রামের ৪ শিশু পিতা-মাতাবিহীন ভাসছে অথৈ সাগরে

তবুও তাদের চোখে-মুখে রয়েছে নানা স্বপ্ন
মাজেদুল হক মানিক: বারো বছর বয়সী আশিকের সকাল আর সন্ধ্যা কাটে চা বিক্রির মধ্যদিয়ে। তবুও ছোট তিন ভাই বোনের মুখে তিনবেলা ঠিকমতো খাবার ওঠে না। অনাদর আর অবহেলায় অন্যের দয়ায় বেড়ে উঠছে এতিম এ চার শিশু। এমন পরিস্থিতি চোখের পানিতে ধুয়ে দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই বয়োবৃদ্ধ দাদা লালন মিয়ার।
ভুক্তভোগীরা জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কষবা গ্রামের রাশিদুল ইসলামের শিশুপুত্র আশিক, মুস্তাকিম, রিয়াজ ও কন্যা কুলছুম। পরকিয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী ও চার শিশু সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে রাশিদুল। তখন থেকেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চরম বিপাকে প্রথম স্ত্রী সানোয়ারা। চার শিশুকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছিলেন তিনি। কিন্তু নিয়তির খেলায় তিন বছর আগে সানোয়ারা মারা গেলে সব হারায় তার সন্তানেরা। দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে আলাদা বাড়িতে বসবাস করে রাশিদুল। চার ছেলে-মেয়ের খোঁজ নেয়ার সময় কোথায়? তাদেরকে ফেলে দিতে পারেননি রাশিদুলের পিতা লালন হোসেন। এতিম শিশুদের কথা ভেবে নতুন করে জীবনযুদ্ধে নেমেছেন। দিনমজুরি করে তাদের জন্য তিনবেলা আহার জোগাড় করায় অসম্ভব। লেখাপাড়া আর আনুষঙ্গিক খরচের টাকা জোগানো তো দুঃস্বপ্ন। কী হবে তাদের ভবিষ্যত? আর কেমন করে কাটবে সামনের দিনগুলো। এসব চিন্তায় দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশুদের দাদা লালন।
শিশুদের দাদা লালন বলেন, অনেকেই বলেছেন শিশুদের কোথাও দত্তক দিতে। কিন্তু কলিজার টুকরাগুলো কীভাবে অন্যের হাতে তুলি দিই? জীবন দিয়ে হলেও তাদের প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি।
এদিকে চার শিশুর দেখভাল না করায় তার পিতা রাশিদুলের ওপর স্থানীয়দের ক্ষোভ রয়েছে। নিজেদের সন্তানদের প্রতি অবহেলার বিচার করতে অক্ষম সামাজিক ব্যবস্থা। তাই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাশিদুলকে বাধ্য করার দাবিও করলেন অনেকে।
এসব শিশুদের চোখে-মুখেও রয়েছে নানা স্বপ্ন। পিতা-মাতা বিহীন সংসারের অথৈ সাগরে ভাসছে যদিও। এই বয়সেই তাদের নামতে হয়েছে জীবনযুদ্ধে। দিনমজুরি আর চায়ের দোকান চালিয়ে দাদাকে সহযোগিতার চেষ্টা করছে আশিক। অথচ তাদেরও স্বপ্ন লেখপাড়া শিখে ডাক্তার ও আর পুলিশ অফিসার হবে।
প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক মোকলেছুর রহমান বলেন, আমরা স্বাধ্যমতো চেষ্টা করি। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে। তবে এতোবড় দায়িত্বপালনের সামাজিক ব্যবস্থা আমাদের নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদী হাসান লিলু বলেন, সরকারি যে সহযোগিতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া হয় তার কোনটির নীতিমালার মধ্যে এ পরিবার পড়ে না। তাই মানবিক দৃষ্টিতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানালেন তিনি।