বগুড়ায় কুচি কুচি টাকা নিয়ে হুলস্থূল

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ার শাজাহানপুরের জালশুকা এলাকার সড়ক ও সড়কের পাশের ডোবায় মঙ্গলবার পাওয়া বিপুল পরিমাণ কুচি কুচি টাকা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। কৌতূহলও কম দেখা যায়নি। তবে এসবের ইতি টেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া কার্যালয় জানিয়েছে, এগুলো তাদের বাতিল ও অচল টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাতিল নোট পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এর ওপরের, অর্থাৎ ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট কুচি কুচি করে কেটে ফেলে দেয়ার নিয়ম। জালশুকা এলাকায় পাওয়া টাকার কুচি বাংলাদেশ ব্যাংকের অচল ও বাতিল হিসেবে ফেলে দেয়া টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, বগুড়া কার্যালয়ে কুচি করা টাকার ১ হাজার ৮০০ বস্তা জমা হয়েছিলো। গত ২২ আগস্ট সেখান থেকে ২৪০ বস্তা ফেলে দেয়ার জন্য পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেয়া হয়। পরে পৌরসভা ট্রাকে সেগুলো সেখানে নিয়ে ফেলে। পরিবেশের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে টাকা পোড়ানো হয় না। এগুলো কোথাও ফেলে দেয়ায় নিয়ম। শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাস্তা ও পাশের ডোবায় কুচি কুচি করা টাকা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন আজ (গতকাল) পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পায়। পরে পুলিশ জানতে পারে এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেলে দেয়া বাতিল টাকার নোট। ওই ডোবায় ছেঁড়া টাকা তোলার কাজে যুক্ত শাহজাহান ম-ল বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় দুজন নারী বস্তায় করে টুকরো টাকা এখান থেকে সংগ্রহ করে পাশের গ্রামে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। এটা শোনার পর তিনিসহ বেশ কয়েকজন এখানে এসে দেখেন, ঘটনা সত্য। তবে বিষয়টি আজ (গতকাল) পুলিশকে জানানো হয়।
ট্রাক থেকে টাকা ফেলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জালশুকা উত্তরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র জাহিদ মিয়া বলে, ২১ সেপ্টেম্বর রাতে সে মাছ ধরতে যাচ্ছিলো। তখন সে দেখতে পায়, হলুদ রঙের একটি ট্রাক থেকে টাকা ফেলে দেয়া হচ্ছে। সে তখন চালকের কাছে জানতে চায়, এত টাকা কোথা থেকে এলো। চালক তখন তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। মাছ ধরে ভোরের দিকে ফেরার সময় সে দেখে, দুজন রাস্তা থেকে বস্তায় করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
সকাল থেকে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে ব্যাপক আলোচিত এই ঘটনার ব্যাপারে দুপুরে স্পষ্ট হওয়া যায়, এগুলো কারও ফেলে দেয়া টাকা নয়। বাতিল বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এগুলো ফেলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে এই আলোচনার সমাপ্তি হলেও পৌরসভা এভাবে জলাশয়ে বর্জ্য হিসেবে কিছু ফেলে যেতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে বগুড়া পৌরসভার সচিব রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কুচি করা টাকার বস্তা সংগ্রহ করে পৌরসভার নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে ফেলার কথা ছিলো। এ কাজ দেখভালের দায়িত্ব ছিলো পৌরসভার পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক মামুন অর রশীদের। তবে তিনি তাতে গাফিলতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, পৌরসভার নিজস্ব গাড়ি নেই। ভাড়া করা ট্রাক দিয়ে কুচি করা টাকা পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনে নেয়ার কথা থাকলেও চালক মো. মাসুম সেটি করেননি। তিনি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য গাড়ি নিয়ে নিজের বাড়ি জালশুকাতে চলে যান। তবে এলাকাবাসী তাকে জানান, এগুলো পোড়ানো যাবে না। তখন তিনি সেগুলো এই সড়ক ও পাশের ডোবায় ফেলে দেন।
যে ট্রাকে করে কুচি করা টাকা যেখানে ফেলা হয়েছে, সেই ট্রাকের চালক মো. মাসুম বলেন, এগুলো পোড়ানো যাবে না জানার পর তিনি ডোবার পাশে ফেলে আসেন।