বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান দুদুর বক্তব্যের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রলীগের বিক্ষোভ ও দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার রাতে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় দুদুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর ভাইয়ের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল যুবক গিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অভিযোগ ছাত্রলীগ দু’দফা হামলা চালিয়ে ওই বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। তবে ছাত্রলীগ তা অস্বীকার করেছে। এর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ শামসুজ্জামান দুদুকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে এবং দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে ছাত্রলীগ।
বেসরকারি চ্যানেল ডিবিসি নিউজে একটি টকশো অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলার কারণে জেলা ছাত্রলীগ চুয়াডাঙ্গায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে শামসুজ্জামান দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ডিবিসি নিউজ চ্যানেলে গত মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত ‘ছাত্রদল থেকে কাউন্সিল বিএনপির ভাবনা কী’ বিষয়ক টকশোতে অন্যান্য অতিথির সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কৌশল হচ্ছে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যেভাবে শেখ মুজিব বিদায় হয়েছে, শেখ হাসিনা বিদায় হবে।’ ওই আলোচনায় বিএনপি নেতার কাছে উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিলো, নিজেদের রাজনীতি নিয়ে ‘সামনের দিনের কৌশলটা কী হবে?’।
এ বক্তব্যের পর চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। চৌরাস্তার মোড়ে বক্তৃতার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক বলেন, ‘শামসুজ্জামান দুদুকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। সেই সঙ্গে দুদুকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।’ বক্তারা বলেন, একটি টেলিভিশনের টকশোতে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু যেভাবে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে উৎখাতে প্রাণনাশের হুমকি দেন তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতারা। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের উপস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক ও সহসভাপতি শাহাবুল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ নেতা শেখ সেলিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পি, সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ নেতা অয়ন হাসান জোয়ার্দ্দার, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক প্রমুখ।
একই দাবিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও মোটরসাইকেল শোডাউন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ। বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে চুয়াডাঙ্গাস্থ দুদুর বাসভবনের সামনে এসে প্রতিবাদসভা করে। প্রতিবাদসভায় একই সাথে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। মো. জানিফ বলেন, নির্লজ্জ বেহায়া শামসুজ্জামান দুদু সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ষড়যন্ত্র; এই শব্দত্রয়ের ওপর ভর করে বিএনপি রাজনীতি করে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বিগত এক দশক ধরে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বিএনপির আরাধ্য ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ষড়যন্ত্র’ মোকাবেলায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা। তাই বিএনপির এখন রাজনীতি করার কোনো অনুষঙ্গ নেই। রাজনীতির মাঠে এখন তারা দেউলিয়া হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ায় অবিলম্বে শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি করে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ। মিছিল ও শোডাউনে আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষকলীগের সদস্য আব্দুল আলিম ভুলন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাকির হুছাইন জ্যাকি, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য গাজী ইমদাদুল হক সজল, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ প্রমুখ। মিছিল চলাকালে শহরের সরকারি গার্লস স্কুলের সামনে শামসুজ্জামান দুদুর বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এদিকে শামসুজ্জামান দুদুর বৈমাত্রেয়ভাই বদরুজ্জামান বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল যুবক আচমকা এসে আমার বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আবদুল জব্বার সোনা ও যুগ্মআহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু অভিযোগ করেন ‘ছাত্রলীগ দু’দফায় ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. সাইদ মো. শামীম রেজা ডালিম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম। অপর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাজিদ হাসান মালিক সজিব জানিয়েছেন ‘ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর চুয়াডাঙ্গাস্থ বাড়িতে নগ্ন হামলা চালিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের আসবাবপত্রসহ বাড়িঘর ভাঙচুর করে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাজাহান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিনসহ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সেই সাথে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জেলা ছাত্রদল কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকেই তার দায়ভার নিতে হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারা কখন ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে তা আমরা জানি না।’ এদিকে শামসুজ্জামান দুদুর ভাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুরের পর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন। এদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাইলাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ, সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, ‘সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রলীগের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ওই মিছিলের পেছন থেকে কতিপয় উচ্ছৃংখল যুবক শামসুজ্জামান দুদুর বৈমাত্রেয় ভাই বদরুজ্জামানের বাড়ির বারান্দায় সামান্য ভাঙচুর করেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’