ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি, কেউ বা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলে থাকেন, অথচ বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও ঠাঁই হয়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করে থাকে লন্ডনভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’। এ সংস্থার চলতি বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৯২টি দেশের ১৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে হাজারের পরে। বিপরীতে ভারত ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ ভালো করেছে। তালিকার ৩০০ থেকে ১ হাজারের মধ্যে ভারতের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, শীর্ষ হাজারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে সংস্থাটির চার বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৪০০ ধাপ পিছিয়েছে। আমরা তাহলে কী নিয়ে গর্ব করছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করা হয়েছে পাঁচটি মানদ- বিশ্লেষণ করে। এগুলো হলো- শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণার সংখ্যা ও সুনাম, সাইটেশন বা গবেষণার উদ্ধৃতি, এ খাত থেকে আয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বা সংশ্লিষ্টতা। অতঃপর বলার অপেক্ষা রাখে না, এই পাঁচ মানদ-ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ফল করতে পারেনি। কেন এই ব্যর্থতা? র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং প্রকাশ করে, তারা বাণিজ্যিক উদ্দেশেই এসব করে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক র্যাংকিংয়ে বিশ্বাস করে না।’ এসব বক্তব্য দিয়ে কি লজ্জা ঢাকা যাবে? এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, গবেষণার সংখ্যা ও মান কমে যাওয়া, শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষা-বাণিজ্য, সহিংস রাজনীতি ইত্যাদি নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ভীষণভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, গবেষণার সময় পাবেন কীভাবে তারা? অবশ্য গবেষণার জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়, তা যৎসামান্য। এ অর্থও আবার সঠিক খাতে খরচ হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতাও এর মান পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এর শিক্ষাক্রমও যুগোপযোগী নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান র্যাংকিং প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কিনা বলা যাচ্ছে না। কারণ চলতি বছরের মে মাসে একই সংস্থা যখন এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং প্রকাশ করেছিলো, সেই তালিকার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ঠাঁই পায়নি এবং তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের র্যাংকিংয়ের বিরোধিতা করেছিলো। সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়ানোর প্রতি সচেষ্ট হওয়া।