দিনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগের প্রধান ফটক

বরাদ্দের বেড়াজালে থমকে গেছে বনায়ন কার্যক্রম
বখতিয়ার হোসেন বকুল: বর্ষা পেরিয়ে শরৎ। গাছ লাগানোর ভরা মরসুম এখন। অথচ দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগে নেই কোন চারা বেচাকেনার তোড়জোড়। দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে বন বিভাগের প্রধান ফটক। কয়েক বছর আগেও এলাকার মানুষ বনায়ন গাছের চারার সন্ধানে এই বন বিভাগেই ছুটে আসতো। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো চারা বেচাকেনা।
বন বিভাগে কর্মরত মালি থেকে শুরু করে ফরেস্টার পর্যন্ত কারোরই যেন ছিলো না দম ফেলার ফুরসত। ফলজ, বনজ, ওষুধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারায় ভরপুর। পুরো বন বিভাগ এলাকা জুড়েই ছিলো সবুজের সমারোহ। বন বিভাগের সামনে লেগেই থাকতো চারা ক্রেতাদের ভিড়। তাদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠতো বন বিভাগ আঙিনা। ২০১০ সালের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এ উপজেলায় যতোটুকু বনায়ন কার্যক্রম হয়েছে তার সিংহভাগই করেছে বন বিভাগ। দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগের মাধ্যমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সড়কের দুধারসহ এলাকার পতিত জমিতে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে বন বিভাগের সেই ব্যস্ততা আর চোখে পড়ে না। দেখা মেলে না চিরচেনা সেই রূপ।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে উপজেলা বন বিভাগের মাধ্যমে গাছ কেনাবেচা নেই বললেই চলে। ফলে বর্তমানে বনায়নের জন্য এলাকার মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা নার্সারি মালিকদের কাছ থেকে দ্বিগুন দামে কিনছেন গাছের চারা। বরাদ্দ না থাকায় চাহিদা মাফিক বনায়ন কার্যক্রম সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তারা।
দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বনায়নের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বিধায় ওই বছর বনায়ন কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জামরুল, পেয়ারা, জাম, মেহগনি মিলিয়ে মাত্র ৫ হাজার চারা বরাদ্দ পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৩০ লাখ শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফলজ, বনজ ও ওষুধি মিলিয়ে মোট ৮ হাজার চারা বনায়ন করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পেয়ারা, কদবেল মিলিয়ে ৩ হাজার চারা বিক্রি করা হয়েছে। এ বছর বনায়নের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১০ হাজার টাকা।
দামুড়হুদা উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কায়জার আলী পল্টু জানান, উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবছর যে ফলদ বৃক্ষমেলা হয় সেখানে দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগের ভূমিকা চোখে পড়েনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা শুধুমাত্র একটি স্টল দিয়েই বসে থাকে। চারা বিক্রি করতে দেখা যায় না। তিনি আরও জানান এ উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানাধীন মোট ২৬টি নার্সারি রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা নার্সারি মালিকরাই মূলত বৃক্ষমেলায় প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা রকিব উদ্দীন দৈনিক মাথাভাঙ্গার দামুড়হুদা ব্যুরো প্রধানকে জানান, উপজেলা পর্যায়ে এখন আর আগের মতো বরাদ্দ দেয়া হয় না। তাছাড়া বনায়ন করার মতো সরকারি রাস্তা কিম্বা পতিত জমিও তেমন নেই। ফলে বনায়ন কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আগামীতে বেশি পরিমাণ বরাদ্দ পেলে বনায়ন কার্যক্রমে গতি ফিরতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Leave a comment