ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীসহ আরও ৩ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুই জেলায় দুই নারী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন রওশন আরা (৫৫) এবং সিরাজগঞ্জে নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা গেছেন নিলুফার ইয়াসমিন (৫৬)। অপরদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুরের শিবচরের উদেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবরের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রওশন আরা নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো। তার স্বামীর নাম মোসলেম উদ্দিন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম ফেরদৌস গতকাল বেলা ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর রওশনা আরা নামের ওই নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর তাকে কুষ্টিয়া হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটায় ১২ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত ১২ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর হয়ে আসার পর আবদুল মালেক নামের একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি রাজধানী ঢাকায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর শাপলা বেগম নামের এক নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনিও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নিলুফার ইয়াসমিন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিলুফার ইয়াসমিন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রহমতগঞ্জ গ্রামের মৃত নূরুল ইসলামের স্ত্রী। নিলুফা ইয়াসমিনের ছেলে সুমন জানান, গত বুধবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শহরের নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তার মা নিলুফার ইসলাম। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শুক্রবার রাতে চিকিৎসকরা ঢাকায় স্থানান্তরের কথা বলেন। রাতে ঢাকার সিএমএইচে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. এম এম মাসুদ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় মোট ৮০৭ জন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো। এর মধ্যে বর্তমানে ৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জেলায় দুজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুরের শিবচরের উদেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবরের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের রামরায়েরকান্দি গ্রামের লালমিয়া মাদবরের ছেলে। সেলিম গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তবে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। গত শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার সকালে তার লাশ গ্রামের বাড়ি আনা হয়। এ নিয়ে জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হলো। জানা যায়, উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবর গত ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিবচরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিন বুধবার তাকে পরিবারের লোকজন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছিলো। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিক তার মৃত্যু হয়।