মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনে যা থাকা দরকার তা নেই অপ্রয়োজনীয় সবই আছে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনটিতে বিভিন্ন দোকান, ক্যারম খেলার ঘর, তিন চাকার গাড়ি রাখার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। স্টেশনের যাত্রীছাউনিতে রাখা হয় গরু। প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে চলাচল করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি। স্টেশনে বখাটেদের আড্ডা বসে নিয়মিত। এককথায় এই স্টেশনে অপ্রয়োজনীয়-অপ্রত্যাশিত সবই আছে, যা থাকা দরকার তার অনেক কিছুই নেই।

জানা গেছে, স্টেশনটিতে ১৫-১৬ বছর ধরে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। বর্তমানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় এখানে মহানন্দা ও নকশি কাঁথা নামের দুটি ট্রেন থামে। আপ ও ডাউন মিলে দুটি ট্রেন থামে চারবার। একজন স্টেশন মাস্টার এবং একজন গেটম্যান দিয়ে চলে স্টেশনের কাজ। স্টেশনে যাত্রীদের বসার কোনো জায়গা নেই, পরিবেশও নেই। ট্রেন কখন আসবে স্টেশন মাস্টার নিজেও তা জানেন না। যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মের ফাঁকা স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে বা পায়চারি করে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্ল্যাটফর্মে একটি টিনশেড আছে। রোদ ও বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে যাত্রীরা সেখানে অপেক্ষা করবে, সেই সুযোগ নেই। টিনশেডটি এখন গরুর গোয়াল। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে স্টেশনটি ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

স্টেশনের দুই পাশেই প্ল্যাটফর্মে রয়েছে কয়েকটি মুদিখানা ও চুল কাটার সেলুন। ক্যারম খেলার ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। পশ্চিম দিকের প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি স্থানে আছে একটি চায়ের দোকান। দোকানটি বেশির ভাগ সময় থাকে জমজমাট। দোকানের সামনে আছে বসার ভালো ব্যবস্থা।

এলাকাবাসী জানায়, স্টেশনটির চারপাশ ফাঁকা থাকায় যে কেউ যখন খুশি স্টেশনে ঢুকতে ও বেরোতে পারছে। একসময় এ স্টেশনে বাউন্ডারি প্রাচীর ছিল। এখন আর তা নেই। একদিকের প্রাচীর ভেঙে কে বা কারা ইট নিয়ে গেছে। একটি টিনশেডের টিনও রাতারাতি গায়েব হয়ে গেছে। অনেক আগে থেকেই প্ল্যাটফর্মটি হয়ে গেছে তিন চাকার গাড়ি রাখার স্ট্যান্ড। ভ্যানচালকরা তাদের ভ্যানগাড়ি প্ল্যাটফর্মে তুলে রাখছে।

মোমিনপুর স্টেশনে যাওয়ার পথেই অ্যাডভোকেট মো. বদর উদ্দিনের বাড়ি। তিনি জানান, স্টেশনের পাশের রাস্তার দুই পাশে হাট বসে। স্থায়ী কিছু দোকানও আছে। এলাকাটি বেশ জমজমাট। পাশের নীলমণিগঞ্জ, আমিরপুর, মোমিনপুর, বোয়ালমারী ও সরিষাডাঙ্গার মানুষ স্টেশনের পাশের হাট থেকে কেনাকাটা করে। এখনকার অনেক শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করে। এসব বিবেচনায় স্টেশনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মেইল ও আন্ত নগর ট্রেন না দাঁড়ানোর কারণে স্টেশনটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগেই স্টেশনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমন অব্যবস্থাপনা। রাত নামলে স্টেশনে বসে মাদকের আড্ডা। নিজস্ব লোকবল না থাকায় তাদের প্রতিহত করা সম্ভব নয়।

বোয়ালমারী গ্রামের কাজল হোসেন বলেন, আন্ত নগর ও মেইল ট্রেন এ স্টেশনে বিরতি দেয় না। সে জন্য এই এলাকার বেশির ভাগ যাত্রী বাস বা অবৈধ আলমসাধু ও নছিমন-করিমনে যাতায়াত করে। কাউকে যশোর-খুলনা কিংবা রাজশাহী, কুষ্টিয়া বা গোয়ালন্দ যেতে হলে ১৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আলমডাঙ্গা থেকে বা ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে হয়।

স্থানীয় লোকজন জানায়, স্টেশনটি একসময় বেশ জমজমাট ছিল। অনেক যাত্রী এ স্টেশন দিয়ে যশোর-খুলনা কিংবা গোয়ালন্দ ঘাট ও রাজশাহী রুটে যাতায়াত করত। এখনো সেই সুযোগ আছে। লোকবল বাড়িয়ে আধুনিকায়ন করা হলে স্টেশনটি আগের জৌলুস ফিরে পাবে। এ স্টেশনে আরো কয়েকটি ট্রেনের বিরতি দিতে হবে। তাহলে এখনকার অব্যবস্থাপনাও দূর হবে। যাত্রীরাও পাবে সন্তোষজনক সেবা।

মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্টেশনটিতে দিনভর খেলা-আড্ডা হয়। বসেছে চায়ের দোকান। মোটরসাইকেল চালানো হয় প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে। এসব ঠেকানো যায় না। কেউ কথা শোনে না। যার যা ইচ্ছা, স্টেশনে এসে তাই-ই করছে। কিছু বলতে গেলে হুমকি আসে। স্টেশনের দায়িত্বে একমাত্র আমি। সঙ্গে আছেন একজন গেটম্যান। স্টেশনে লোকবল না থাকায় আমাদের কথা কেউ শোনে না।’

চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ১০টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে নানা কারণে পাঁচটিতে লোকবল বেশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ কারণে ওই পাঁচটি স্টেশনের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ।