অনলাইন ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাড়ে ১৪শ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেয়ার বিষয় নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করছেন জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে এ টেন্ডারের কাজ নিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি যে হয়েছে, তা এখন প্রতীয়মান।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ বলেন আর সেচ্ছাসেবক লীগ বলেন। এসব সংগঠনের নেতারা সকলেই লেখাপড়া ছেড়ে এখন টেন্ডারের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে। অনৈতিক ভাবে কোটি টাকা ইনকামের নেশায় মেতে উঠেছে। টেন্ডারের কোটি টাকা কমিশন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে ও গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে গোলাম রাব্বানী বলেছেন, জাবি ভিসি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন এবং তার স্বামী ও ছেলে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়েছেন। তবে জাবি ভিসি ফারজানা ইসলাম রাব্বানীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাব্বানী বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নানা দাবি-আবদার করেছেন। সেসব পূরণ না হওয়ায় হতাশ হয়েই এসব কথা বলছেন। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয় জানিয়েছেন বলেও বলছেন জাবির ভিসি ফারজানা ইসলাম।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ৯ আগস্ট জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের এক কোটি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে এক কোটি টাকা বণ্টন করে দিয়েছেন। যেখানে ভিসির পরিবারের দুই সদস্যও ছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে অভিযোগের তদন্ত দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে জাবিতে, যে আন্দোলন এখনো চলছে।
অপরদিকে শুরু থেকেই ছাত্রলীগকে ওই টাকা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করেছেন ভিসি। তিনি বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের টাকা দাবির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে জাবি থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগের যুক্তি খন্ডাতে গত বুধবার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে রাব্বানী বলেন, বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্যের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছেন। যার প্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই প্রেক্ষিতে উপাচার্য আমাদের স্মরণ করেন। আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। উক্ত পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি যা সমীচীন হয়নি। এ জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
রাব্বানীর এ বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ভিসি ফারজানা ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, চাওয়া-পাওয়া পূরণ না হওয়ায় হতাশ হয়ে তারা এসব মানহানিকর কথাবার্তা বলছে। তারা দু’জন ৮ আগস্ট আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। এ সময় তারা প্রকল্প থেকে ৪-৬ ভাগ টাকা দাবি করে। তারা বলে, প্রধানমন্ত্রী নাকি তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদেরকে টাকা দিলে তারা নাকি স্থানীয় ছাত্রলীগকে সেখান থেকে ভাগ করে দেবে। তখন আমি বলি, যদি সেরকমই হয়ে থাকে তাহলে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই টাকা দেই। তোমরা সেখান থেকে নাও। তারা আমার কথায় হতাশ হয়। এর আগে আমি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়ও তারা দেখা করতে যায় আমার সঙ্গে। তখন তারা তিন বা চারটি হলের টেন্ডার তাদেরকে দিতে বলে। আমি তাদের না করে দেই। তারপরও বিশাল বহর নিয়ে তারা সেখানে হাজির হয় । এটা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে। আমিও বিব্রত হই।
ভিসি আরও বলেন, আমার ছেলে-স্বামী কখনই তাদের ফোন করেনি। বরং তারাই ফোন করে দেখা করতে এসেছিল। তারা বিভিন্ন সময় প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের ডিস্টার্ব করে টাকার জন্য। এখন এসব কথা বলে তারা আমার পরিবারের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে ভিসি জাবির শাখা ছাত্রলীগকে টাকা দেয়ার যে অভিযোগ গোলাম রাব্বানী তুলেছেন তা স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তবে অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন শাখার সভাপতি জুয়েল রানা। তিনি বলেন, ভাই আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই এসব কথা বলেছেন। তিনি যেখান থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেটা ভুল তথ্য ছিল। এটা ভাইয়ের তথ্যগত ভুল। টাকা পাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।