বারাদী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের নতুন দরবেশপুরের শৈলমারী বিলপাড়ে দুর্বৃত্তদের নৃশংস হত্যাকা-ে নিহত যুবলীগ নেতা রোকন ও তার চাচাতো ভাই হাসানের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। এদিকে দুই ভাইয়ের লাশ গ্রামে পৌঁছুলে পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। দুজনের অকালমৃত্যু যেন কেউই মেনে নিতে পারছে না। গতকাল বাদআছর স্থানীয় কবরস্থানে দুই ভাইয়ের লাশ দাফন করা হয়। গত বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নতুন দরবেশপুর গ্রামের ইদ্রিস মাস্টারের ছেলে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রোকন বিশ্বাস (৩২) ও আজাদ বিশ্বাসের ছেলে ওয়ার্ড যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক হাসান বিশ্বাসকে (৪৫) পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদের পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ।
নিহত রোকন দরবেশপুর গ্রামের উকিলবাড়ির ইদ্রিস মাস্টারের দুই ছেলের মধ্যে রোকন বিশ্বাস ছোট। সে মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর লেখাপড়া করেনি। শুরু করেন ভূষিমাল ব্যবসা। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। আ.লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই প্রায় ১০ বছর যাবৎ পার্টনারে শৈলমারী (সরকারি) বিল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। ২০০৫ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার মৃত খাদেম আলীর একমাত্র মেয়ে আলেয়াকে বিয়ে করেন তিনি। পারিবারিক জীবনে সে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে অভি (১০) স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্ডেনে ৪র্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত, মেয়ের বয়স ১০ মাস। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী আলেয়া পাগল প্রায়। আলেয়ার মনে হাজারো প্রশ্ন হাজারো জিজ্ঞাসা। আমার স্বামী কখন বাড়ি ফিরবে? বলেন তো ভাই, সে কি আর আপনাদের সাথে ঘুরতে যাবে না? কেন আমার নিরপরাধ স্বামীকে হত্যা করা হলো? সেতো কারো কোনোদিন ক্ষতি করেনি। তার এই দুই নিষ্পাপ সন্তানকে দেখবে কে? বড় হয়ে আব্বু ডাকবে কাকে? এমন হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলো এই প্রতিবেদকের দিকে। তিনি বলেন, আমি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার ন্যায্য বিচার চাই। দ্রুত আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে ফাঁসির ব্যবস্থা করা হোক।
নিহত হাসান বিশ্বাস একইপাড়ার আজাদ বিশ্বাসের ৪ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে বড়। নিজস্ব জমি ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাতো সে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই প্রায় ১০ বছর যাবৎ পার্টনারে শৈলমারী (সরকারি) বিল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। হাসান ২ সন্তানের জনক। বড় ছেলে ফরহাদ মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে চাকরি করেন ও ছোট ছেলে ফাহিম একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।