ভূমি অফিসে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের স্বর্গরাজ্য

 

দেশে দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি কেনাকাটায় মামুলি জিনিসের আকাশচুম্বী দাম দেখিয়ে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে সেবা খাতে মানুষকে জিম্মি করে বাড়তি অর্থ আদায়, নিয়োগ ও বদলিতে বড় ধরনের অবৈধ লেনদেনের খবরে সাধারণ মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার দশা। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার এ ঘোষণা যে কারও কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি, তার প্রমাণ সরকারি কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির খবরের পাশাপাশি টিআইবি কর্তৃক প্রকাশিত ভূমি মন্ত্রণালয়ে ঘুষ ও বদলিতে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের খবর। সোমবার টিআইবির প্রকাশিত ‘ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। টিআইবি বিদেশিদের বুলি আওড়ায় ইত্যাদি বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা না করে ভূমিসহ প্রতিটি খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত সরব হতে হবে। ভূমির দলিল নিবন্ধনে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ, দলিলপ্রতি সমিতিকে বাধ্যতামূলকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা, নকলনবিস থেকে মোহরার পদে যোগদানে ২ থেকে ৮ লাখ টাকা, মোহরার থেকে সহকারী পদে যেতে ১০ লাখ টাকা ও দলিল লেখকের লাইসেন্স পেতে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন করতে হয়।
সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে বদলি হতে হলে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয়। এর বাইরে ভূমি অফিসে সেবা পেতে আসা মানুষদের দলিলের নকল তোলা, নামজারি, হালনাগাদ তথ্য পাওয়াসহ প্রতিটি পদক্ষেপে দিতে হয় অফিসভেদে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের ঘুষ। দ্রুত কাজ হাসিলের জন্যও গুনতে হয় বাড়তি টাকা। এভাবে ভূমি অফিসে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের স্বর্গরাজ্য কায়েম হয়েছে।
কেবল ভূমি অফিসেই নয়, সরকারের প্রতিটি দফতরে কেনাকাটায় বিপুল পরিমাণ অর্থের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ থেকে সাধারণ তৈজসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্য ও সেগুলো ফ্ল্যাটে তোলার কল্পনাতীত মাশুলের খবর পুরনো না হতেই ফরিদপুরে সরকারি হাসপাতালে কিছু পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দেখানোর খবর বেরিয়েছে। বস্তুত প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেনাকাটা, নিয়োগ-বদলি, প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ আদায়সহ সব ধরনের দুর্নীতিই জেঁকে বসেছে বিভিন্ন দফতরে। চলতি বছরের শুরুতে সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন মন্ত্রীরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জনগণের আশার পারদ ওপরে উঠিয়েছিলেন। বিশেষত ভূমিমন্ত্রী কর্তৃক অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব, আয়ের তথ্য হালনাগাদ করা ও মন্ত্রণালয়কে ডিজিটাল করার প্রতিশ্রুতি ছিল আশান্বিত হওয়ার মতো। কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের পর আমাদের আশাহতই হতে হয়। তবে সময় পুরিয়ে যায়নি। এখনই জমির নামজারি থেকে সবকিছু ডিজিটালাইজড করার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে আমলে নিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে অবিলম্বে।