আলমডাঙ্গার পাঁচলিয়ায় স্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

জামজামি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা জামজামির মাঠ পাঁচলিয়া গ্রামে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী কল্পনার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর হতেই পরিবার দাবি করতে থাকে সে ঘরের আড়াই গলায় ওড়নার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহসহ সঙ্গীয় ফোর্স। পুলিশ কর্মকর্তা, নাবালিকার মৃত্যুর নৈপথ্য উদ্ধারে স্বজনদের অভিমত শোনেন। স্বজনরা এ আত্মহত্যার নৈপথ্যে স্কুলছাত্রী কল্পনার উপসর্গ কূ-দৃষ্টি ও মস্তিষ্ক সমস্যা বলেন। কিন্তু সেই মান্ধাত্মা আমলের দাবি দাওয়া আমলেই নেননি পুলিশ কর্মকর্তা। কল্পনার বই-খাতার পাতায় লেখা হৃদয় ছোয়া গান ও মোবাইল নম্বারে মৃত্যু রহস্যের দ্বার খুলে দেয়। প্রেম ঘটিত এ মৃত্যুর নৈপথ্য উদ্ধারে লাশের ময়নাতদন্ত করাতেই মরদেহ পাঠানো হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা জামজামির মাঠ পাঁচলিয়া গ্রামের দরিদ্র কলম আলির মেয়ে কল্পনা খাতুন (১৪) পাঁচলিয়া জামাল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। পরিবারের দাবি, সরকারি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ঘরে কল্পনা পড়তো ঘুমাতো। বাবা কলম-মা রোজিনা বেগম দু’ছেলে নিয়ে ঘুমাতো বারান্দায়। গতপরশু রাতে পড়াশোনা শেষে রাতের খাবার খেয়ে যার যার স্থানে শয়ানে যান তারা। ভোররাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হয়ে মেয়ে কল্পনা পুনরায় ঘরে গিয়ে ঘুমায়। একটা ঝনঝন টিনের শব্দে কলম আলীর ঘুম ভেঙে যায়। শব্দের উৎস খুজতে দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখেন মেয়ের ঝুলন্ত লাশ। এসময় তিনি চিৎকার করে স্ত্রী স্বজনদের ডেকে তোলেন। সকালে এ অপমৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জামজামি ফাঁড়ি পুলিশের আইসি এসআই হাকিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স। পুলিশের উপস্থিতিতে শ শ উৎসুক পুরুষের মাঝে এ মৃত্যু রহস্য নিয়ে নানামুখী রহস্যের জটাজল দেখা দেয়। এ রহস্যের জট উন্মোচনে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ। পুলিশ কর্মকর্তা এ অপমৃত্যুর নৈপথ্য উন্মোচনে নেমে এটা প্রেম ঘটিত মৃত্যু বলে নিশ্চিত করেন। নৈপথ্যের প্রেমিকের মোবাইল নম্বর বইয়ের পাতায় লেখা পেয়ে ফোন দেয়া হলে প্রেমিক রানার কাছে। এসময় রানা তাদের প্রেমের বিস্তারিত ইতিবৃত্ত প্রকাশ করে। পাঁচলিয়া জামাল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রানা বর্তমানে আলমডাঙ্গার ব্রাইট মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। প্রেমিক রানা জানায়, খালা বাড়ি মাঠপাড়া পাঁচলিয়ার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রানুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কল্পনার পরিচয় ও সখ্যতা শুরু হয়। এর মাঝে তাকে নিয়ে ঘর ছাড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে স্বজনদের হাতে ধরা পড়ে তারা। রানাকে নিয়ে তার মা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। কল্পনার পরিবার গতরাতে কল্পনাকে অন্যত্র বিয়ে দেবে ঠিক করাতেই সে আগের রাতে এ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। প্রেমিক রানা আলমডাঙ্গা ব্রাইট মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ও কুষ্টিয়ার বলরামপুরের মিজানুর রহমান মিজানের ছেলে। মিজান বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী। মা রানু বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গা জামজামির বানিনাথপুরের তৈয়ব আলির মেয়ে। অভিযোগ নিশ্চিত করতে গিয়ে রানার খোঁজ মেলেনি। সে গাঢাকা দিয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।