স্টাফ রিপোর্র্টার: বৈদ্যুতিক গোলাযোগ (শর্ট সার্কিট) থেকে নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ৫৯টি কন্ট্রোল ইউনিট। এ ছাড়া ৭৮৯টি ব্যালট ইউনিট ও ১ হাজার ২৩৩টি মনিটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও বিভিন্ন জিনসপত্র নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকা। তবে অগ্নিকাণ্ডে নির্বাচন ভবনের মূল স্ট্রাকচারের ক্ষতি হয়নি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত কমিটির রিপোর্টে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তায় পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির প্রধান মো. মোখলেসুর রহমান প্রতিবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ সময় কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টম্বর রাতে ইসি ভবনের বেইজমেন্টে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়েছে। নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্ট-১-এ যেখানে ইভিএম কাস্টমাইজড হয়ে থাকে, সেই জায়গাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছিল রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পেরেছি ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ভবনে যারা ছিলেন তারা ফায়ার সার্ভিস হেডকোয়ার্টারে জানান। পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে প্রথম টিম আসে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ওই রাত ১২টার আগেই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। সেদিন রাতেই ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। তিনি জানান, আগুনে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ইভিএমের ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ইউনিট ৭৮৯টি, মনিটর ১ হাজার ২৩৩টি, মনিটরের ব্যাটারি ৬৪টি, ক্যাবল ৫৯৭ সেট, ল্যাপটপ একটি ও দুটি বার কোড স্ক্যানার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইভিএম সামগ্রীর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৩ টাকা। এ ছাড়া সেখানে থাকা কিছু ইলেকট্রনিক ও অন্যান্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৯টি এসি, সিলিং লাইন ৪৮টি, একটি প্রজেক্টর, হুইল চেয়ার ও অটবি চেয়ার ১৬টি, টেবিল তিনটি, ঘড়ি একটি, সুইচ বোর্ড ১৪টি, বিভিন্ন রকমের ৯টি প্ল্যাগ, ওয়্যারিং চ্যানেল ২ হাজার ফিট এবং ৫০টি ফ্লোর টাইলস। এর মূল্য ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০ টাকা। ভবনের পূর্ত ক্ষতি ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৬ টাকা।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ১২ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। ৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর সঙ্গে সংযুক্তি দিয়েছে আরও ১৮ পৃষ্ঠা। তদন্ত রিপোর্টে ইভিএম ৬টি কন্ট্রোল ইউনিট পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩টি।
তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে অতিরিক্ত সচিব বলেন, কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, বেইজমেন্টে সাড়ে চার হাজার ইভিএম মেশিন ছিল। আগুন নেভাতে প্রচুর পানি দেয়ায় অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ভস্মীভূত ও নষ্ট হওয়া মেশিনগুলো আলাদা করেছি। যেগুলো ব্যবহার উপযোগী বা নষ্ট হয়নি কার্টনের ভেতরে ছিল সেগুলোকেও আলাদা করেছি।
মোখলেসুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাঁচটি সুপারিশ রেখেছি। কমিশন ভবনে ইভিএম কাস্টমাইজ কক্ষের মতো অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলোতে সার্বক্ষণিক সয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কাস্টমাইজসহ অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলো সম্পূর্ণররূপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে। বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম কাস্টমাইজেশন কক্ষটির অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজের ক্ষেত্রে উন্নত তার ব্যবহার করতে হবে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপ্লাগ, তার, সুইচ ও সকেট ব্যবহার করতে হবে। নতুন বৈদ্যুতিক সংযোগ ও প্রাত্যহিক ব্যবহার ক্যালকুলেশন করে ঠিক করতে হবে। প্রতি ছয় মাস পর পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (বিইসি), গণপূর্ত অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয় গঠিত কমিটি দ্বারা বৈদ্যুতিক লাইন ও ফায়ার সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখতে হবে। নির্বাচন ভবনে অত্যধুনিক ইন্টেগ্রেটেড বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, গণপূর্ত বিভাগ-২ -এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ ইয়ামিন-উল-ইসলাম ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের প্রতিনিধি। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ইসির সহকারী সচিব (সেবা-২) খ ম আরিফুল ইসলাম।