স্টাফ রিপোর্টার: পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান বলেছেন, পাসপোর্ট না থাকার সঙ্গে নাগরিকত্ব থাকা না-থাকার কোনো সম্পর্ক নেই; নাগরিকত্ব ত্যাগ করা আলাদা বিষয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদফতরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার এমন বক্তব্য আসে।
মহাপরিচালক বলেন, তারেক রহমানের হাতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোনো পাসপোর্ট নেই। ট্র্যাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরতেও তার কোনো বাধা নেই। তবে দণ্ডিত ও পলাতক আসামি হওয়ায় আপাতত নতুন কোনো পাসপোর্ট তিনি পাবেন না। ২০০৮ সালে সপরিবারে লন্ডন যাওয়ার পর আর ফেরেননি তারেক। সেখানে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের আদালতে দুটি মামলায় তার সাত ও দশ বছরের সাজার রায় হয়। যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক লন্ডন গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ২০১৩ সালে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত ২৩ এপ্রিল বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করেছেন। এর মধ্যদিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলেই তিনি মনে করেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ এপিল যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানে প্রথমবারের মতো দলটি স্বীকার করে নেয় যে, তারেক তার পাসপোর্ট ব্রিটিশ হোম অফিসে জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। ফখরুলের দাবি, তারেক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেননি। ওই বিতর্কের সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার পাসপোর্ট অধিদফতরের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান এখনও বাংলাদেশের নাগরিক কি না। উত্তরে মহাপরিচালক বলেন, ‘নাগরিকত্বের সঙ্গে পাসপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে সবার কি পাসপোর্ট আছে? না থাকলে তারা কি নাগরিকত্ব হারিয়েছে? তা তো না। নাগরিকত্ব একটা আলাদা জিনিস। সে যদি নিজে থেকে বলে যে আমি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করব, সেটা আলাদা কথা। বাট পাসপোর্টের সাথে এটা না।” তারেকের পাসপোর্ট জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কী কারণ দেখিয়েছেন, সেখানে নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো বিষয় আছে কি না- এসব প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, বিষয়গুলো তার জানা নেই। তারেকের পাসপোর্ট জমা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর এই বিএনপি নেতা নতুন করে আর পাসপোর্টের আবেদন করেননি। ‘আমি ডিটেইল চেক করেছি, অন্য কোনো পাসপোর্ট উনি নেননি। সুতরাং উনি লন্ডনে যে আছেন, পাসপোর্টবিহীন- বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়া উনি অবস্থান করছেন।’ এই অবস্থায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করলে তারেক কেন তা পাবেন না, তার ব্যাখ্যায় ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ থেকে বিধি উদ্ধৃত করেন মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট আদেশ অনুযায়ী, আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে ন্যূনতম দুই বছরের সাজা হলে পাঁচ বছরের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। একইভাবে কেউ যদি দেশের কোনো আদালতে কেন ফৌজদারি মামলায় হাজিরা এড়ান বা এড়ানোর চেষ্টায় থাকেন- তাকেও পাসপোর্ট দেয়া যায় না। ‘সুতরাং উনি যদি লন্ডন থেকে পাসপোর্টের আবেদন করেন, তিনি তা পাবেন না। আরেকটা বিষয় হলো, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য তার ন্যাশনাল আইডি নিতে হবে। ন্যাশনাল আইডি পেতে তার বাংলাদেশে আসতে হবে।’ মহাপরিচালক বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ট্র্যাভেল পাস নিয়ে তার মাধ্যমে দেশে আসতে পারেন। দেশে আসার পর তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারেন এবং তারপর নতুন করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। নতুন আবেদন পেলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর তখন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।