চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানের হালচিত্র : সেবাগ্রহণকারীদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্হিবিভাগে বহু রোগী টিকেট কাটলেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ শেষে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। অধিকাংশ চিকিৎসক বিলম্বে হাসপাতালের চেম্বারে প্রবেশ ও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রস্থান বন্ধ হলে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসাদের দুর্ভোগ বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য অনেকের।
গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয়ার জন্য টিকিট নিয়েছেন ৬১৮ জন রোগী। এর মধ্যে পুরুষ ২৭০, মহিলা ২৮৫ এবং শিশু ১৬২ জন। এসব রোগীর অনেকেই চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে গিয়ে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় চেম্বারে চিকিৎসক নির্ধারিত সময় তথা সকাল ৮টার বদলে কেউ প্রবেশ করেছেন ১০টা, কারও কারও আবার একটু বেশিই দেরি হয়েছে। তবে কয়েকজন চিকিৎসককে সকাল ৯টার দিকে তাদের চেম্বারে প্রবেশ করে চিকিৎসা সেবাদানে ব্যস্ত হতে দেখা গেছে। যে সকল চিকিৎসকের চিকিৎসা নেয়ার জন্য অধিক রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সেসকল চিকিৎসককে ১১টার আগে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। ফলে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই বলেছেন, ‘এই গরমে সেই সকাল থেকে বসে আছি। এখন বাজে বেলা সাড়ে ১১টা। এখনও ডাক্তার আসেননি। আমরা এই গরমে কষ্ট করে বসে আছি আর ওনারা ঠান্ডা ঘরে বসে আরাম করছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেকেই গতকাল অভিযোগের ঢালি খুলে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের চেয়ে এখন ইন্টার্নি চিকিৎসক আর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদেরই দাপট বেশি। অথচ সপ্তাহের রোববার ও বুধবার বেলা ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ডাক্তার ভিজিট করার কথা। ওরা সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেমন ভিড় জমায়, তেমনই চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই নিজেরা চিকিৎসাপত্রে ওষুধ না লিখে ওই ইন্টার্নিদের দিয়ে তা লিখিয়ে থাকেন। ফলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে ইন্টার্নিদের কদর বেড়েছে। প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে আবডালে উপঢৌকনও দেয়ার রেওয়াজও বেড়েছে। তাছাড়া সদর হাসপাতালে চোখের ও দাতের পরীক্ষা করার যন্ত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে থাকার কারণে রোগীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সচল থাকলেও সেটা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে জনবলের অভাবে। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি সচল থাকলেও ফিল্ম না থাকার কারনে সেটাও বন্ধ। রাতের বেলা চিকিৎসকদের হাসপাতালে রাউন্ডে যাওয়ার সময় নির্ধারণ না থাকার কারণে রোগীরা গোনেন অনিশ্চয়তার প্রহর। রাত সাড়ে ১১টার সময়ও কোনো কোনো চিকিৎসক রাউন্ডে যান। এ সময় রোগীদের অনেকেই ঘুমে কাতর। গতপরশু শনিবার পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসক রাতে রাউন্ডে গেলে সবাইকে দেখা সম্ভব হয়নি ওই চিকিৎসকের। রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার রাতে চিকিৎসক রাউন্ডে আসলেও কোনো কোনো রোগীর শুধু নাম জিজ্ঞাসা করে চলে যান। দিনের চিত্রও খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। চিকিৎসকেদের কয়েকজন হাসপাতালে সকালে নিয়ম মাফিক না এসে বিলম্বে প্রবেশ করে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে প্রবেশ করে রাউন্ড শেষ করেন। তাতেই বেজে যায় এক থেকে দেড় দু ঘন্টা। এরপর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময়টুকু আউটডোর দায়িত্ব পালন করলেও হতো। তা না করে ১টা বাজতে না বাজতে অনেকে হাসপাতাল ছাড়েন। অথচ নির্ধারিত সময় বেলা ২টা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে অবস্থান করে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হতাশার। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা.খায়রুল আলমের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সারা বাংলাদেশে একই অবস্থা। তবে চেষ্টা করবো চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের সময়মতো অফিস করানোর।