সময়ের স্রোতে যে গা ভাসায় সে পিছিয়ে পড়ে, আর যার মধ্যে থাকে টিকে থাকার দৃঢ়তা সে শতকষ্টেও সময়ের ¯্রােতে সাঁতরাতে থাকে। যারা সাঁতরায় তারাই সমাজে সফল বলে দাবিদারই নয়, স্বীকৃতিও পায়। মাবিয়া খাতুন এদেরই একজন।
মাবিয়ার পিতা নিজাম উদ্দীন ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় বিশ্বাস তাকে আচমকা ঢেলে দেয় খাদে। মানসিক ভারসাম্য হারান। চিকিৎসার ব্যয় যোগাতে স্বচ্ছল সংসারের তপ্ত উননও এক সময় নিভে আসে। ফলে অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে স্বল্প শিক্ষিতা মা আম্বিয়া চাকরি নেন ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পে। শ্রমিক মা তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেই হিমশিম। লেখাপড়ার খরচ জোগাবে কে? বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র মাবিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেও লেখাপড়া পড়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। তার চাচাতো ভাই সেও তখন ছাত্র, তার মাধ্যমে মেধার অপমৃত্যু প্রশঙ্গটি পত্রস্থ করা হয়। মাথাভাঙ্গায় প্রতিবেদনটি কতোজনই তো পড়েছিলেন, কেউ কেউ নিশ্চয় সহযোগিতার হাত বাড়ানোর তাগিদও অনুভব করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত মাবিয়া খাতুন পাশে পান টোটন জোয়ার্দ্দারকে। তিনি সেই থেকে এখন পর্যন্ত তথা টানা ৮ বছর ধরে প্রতিশ্রুতি পালনই করেননি, পিতার মতোই পাশে থেকেছেন।
সকল প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে, সমানে আসা সকল ঘেরাটোপ সে তার ইচ্ছে শক্তির বলে একের পর এক টপকে এখন সফলতার স্বস্তিতেই শুধু নয়, সমাজের অন্যতম অনুকরণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে মাবিয়া খাতুন একদিন ছিলো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে, সেই মাবিয়া খাতুন এখন অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা। মাবিয়াকে অভিনন্দন। কারণ সে কিছুতে দমেনি, থামেনি। অভিবাদন- রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনকে। জীবনগড়ার লক্ষ্য নিয়ে সময়ের ¯্রােতে এক মেধাবী যখন অর্থ সংকটের অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো, তখনই তার সামনে ভরসার সোপান মেলে ধরেন তিনি। শুধু মাবিয়া খাতুনকেই নয়, আরও বেশ ক’জন মেধাবী মেয়ের অভিভাবকত্বও করেন তিনি। দু’কন্যার জনক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের মধ্যে সমাজের অসহায় মেধাবীদের প্রতি তার মহানুভবতা সমাজের অন্যদেরকও অথাৎ সমাজে ছিটিয়ে ছড়িয়ে থাকা মাবিয়াদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ করবে।
অবশ্যই না, দু একজন মাবিয়াকে সহযোগিতা করলেই সমাজের সব দায়িত্ব পালন হয় না। সমাজের সকল মাবিয়ার মেধা বিকাশের পরিবেশ গড়ে তুলতে পারটাই আসল পারা। সেই পারার আগে যারা অসহায়ের পাশে দাঁড়ায় তাদের কুর্ণিশ করতেই হয়।