তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিতর্ক : বিএনপির চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘নাগরিকত্ব বর্জন’ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। গত রোববার বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর বেরোয় যে শাহরিয়ার আলম লন্ডনে বলেছেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট হস্তান্তর করে তার নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘২০১২ সালে তারেক জিয়া তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছে। সে কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়?’ পাশাপাশি সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের মন্ত্রীদের বিশেষ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘হাইকমিশন তো সরকারের অধীন, তাদের বলুন সেটি দেখাতে।’
তার দাবি, ‘অনুষ্ঠানে (প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান) উপস্থিত অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে খুশী করতেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথাটি বলেছেন। পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই যাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। বিদেশেই বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকে।’ রিজভী আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী গর্বের সঙ্গে নিজেকে ব্রিটিশ বলতেই ভালোবাসেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নয়।’ রিজভী আহমেদ বলেন, জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশিদের বিয়ে করেননি। পৃথিবীর কোনো দেশে তারা কোনো নাগরিকত্ব গ্রহণও করেননি। তিনি জানান, তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘তারেক রহমান অসুস্থ অবস্থায় লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে মনের জ্বালা মেটানোর জন্য একেবারে উদগ্রীব হয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের লোকেরা। লন্ডনে গিয়েও অনবরত তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাকে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করবেন- ইত্যাদি নানা কথা তিনি বলেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

তারেকের আইনি নোটিশ: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার তারেকের পক্ষে দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী কায়সার কামাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঠিকানায় আইনি নোটিশটি পাঠান। নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে হয় বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে, নয়তো ক্ষমা চাইতে হবে। এর কোনোটিই না করলে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। কায়সার কামাল বলেন, আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারেক রহমানকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতেই শাহরিয়ার আলম এই বক্তব্য দিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যদি তারেকের পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব বর্জনের যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে তাকে জাতির কাছে অথবা তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে প্রতিমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করা হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে পলাতক আছেন। জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর তিনি আর ফিরে আসেননি। অর্থ পাচার ও দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত তিনি। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি তিনি। এই মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।