ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র পুনর্রুদ্ধার করতে হবে
মেহেরপুর অফিস/গাংনী প্রতিনিধি: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেছেন, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। একই সাথে গণতন্ত্রও কারাবাসে। তাই তৃণমূল পর্যায় থেকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের দুর্বার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। তবেই হবে গণতন্ত্রের পুনর্রুদ্ধার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুরের বারাদী খামারে মেহেরপুর জেলা বিএনপি প্রতিনিধিসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কু-ু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত।
জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করেন। তাহলে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে কেন? কেন আজ সারাদেশের রাস্তাঘাট খানাÑখন্দে ভরা? ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অবশ্য চাকরি দিচ্ছেন তবে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকা নিয়ে। কোথায় আপনাদের প্রতিশ্রুতি? আপনাদের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। আমরাই (বিএনপি) শহীদ জিয়ার কর্মী, আমরাই খাটি দেশপ্রেমী।
খালেদা জিয়ার বাড়ি কেড়ে নেয়া, ইলিয়াছ আলীকে গুম করা এবং অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর মামলা হামলার ঘটনা আমরা ভুলে গেলাম জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন দেশে একটি সমঝোতার নির্বাচন দিই। নির্বাচনে যদি আপনারা জয়লাভ করেন ফুলের মালা দিয়ে মেনে নিবো। কিন্তু আপনারা তাতে রাজি হননি। কেননা ভোটের বাক্স খালি আসবে।
মুক্তিযুদ্ধের নামে বাংলাদেশকে আরেকটি বাকশাল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে বিনাভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলো। সেখানে কোনো মানুষ যায় নাই। পৃথিবীর কোনো দেশে দেখি নাই বিনাভোটে এতোজন এমপি নির্বাচিত হয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন এই সরকার চাই না। এই সরকার চাই খালেদা জিয়া জেলে থাকুক। এই সরকার চাই বিএনপি ভোটে না আসুক। তাই স্পষ্ট ভাষায় আমরা বলতে চায়, বেগম জিয়া জেলে থাকলে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ করে তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়াকে ছেড়ে দিন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। দেখা যাক আপনাদের উন্নয়ন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখেন কয়টা সিট পান। নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার সাহস আপনাদের নেই। তাই পূর্ব পরিকল্পনামত একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে ২০১৮ সালে আরেকটি ষড়যন্ত্রের নির্বাচন দেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে প্রতি জেলার নেতাকর্মীদের ঈমানী পরীক্ষার জন্য সফর করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বের করতে হবে। কোন্দল আমি দেখতে চাই না। আমি পদ পদবীর লালসার দিকে তাকাতে চাই না। আমি চাই আমার নেত্রী জেল থেকে বের হবে, আমার নেতা তারেক রহমান দেশে আসবেন। তাই বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচি রাজপথে সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেষের দিকে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মোবাইল কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। এসময় তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে কর্মীসভা সফল করার জন্য অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দের প্রতি তারেক রহমান বলেন, দায়িত্ব পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে। আমাদের ঐক্যকে ইস্পাতের মতো কঠিন রূপ দিতে হবে। আপনাদের এই একমাত্র ঐক্যই পারে দেশ ও জনগণকে মুক্তি দিতে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বলেন, আজ গণতন্ত্র বন্দি, যেখানে আইনের শাসন ভুলন্ঠিত, শিক্ষাঙ্গণে অস্ত্রের ঝনঝনানি, স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। এরকম সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনর্রুদ্ধারের আন্দোলন সমর্থক। স্বাধীনতার সূর্যদোয় ভূমি মুজিবনগর তথা মেহেরপুর জেলা থেকে এ আন্দোলন সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ^াসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আর বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, আব্দুল্লাহ, আলমগীর খান ছাতু, মেজর (অব.) শরীফ হোসেন মুকুল ও শেখ সাইদ, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আওয়াল ও মনিরুজ্জামান গাড্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো ও রোমানা আহম্মেদ, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মারুফ আহম্মেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি মোরাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা, বিএনপি নেতা ফয়েজ আহম্মেদ ও শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন ইউনিট নেতৃবৃন্দ। জেলার সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে আরও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জেলার নেতারা বলেন, দেশের যে’কটি জেলায় দুর্বার আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে মেহেরপুর জেলা অন্যতম। আগামীতেও কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করা হবে। তবে পুলিশি বাধায় জেলা শহরে কর্মীসভা করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।