চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ায় বাড়ির সীমানায় থাকা একটি নারকেলগাছ নিয়ে বিরোধের জের
স্টাফ রিপোর্টার: সন্ধ্যারাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও লাঠি-বাটাম দিয়ে বেদম পিটিয়ে বিয়াল্লিশ বছরের লালন আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তার প্রতিবেশী প্রতিপক্ষরা। ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আশাদুর রহমান মিলন। ঘটনাটি ঘটেছে গতরাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফার্মপাড়া খাদেমুল ইসলাম মাদরাসার অদূরে।
পিতার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার পিতা লালন আলীর লাশ রাখা হয়েছে হাসপাতাল মর্গে। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হতে পারে। ওয়ার্ড বিএনপি নেতা লালন আলী ছিলেন একজন বস্তা ব্যবসায়ী। তার বাড়ির সীমানায় থাকা একটি নারকেল গাছ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী আল আমিনসহ তার লোকজন ডেকে নিয়ে লালনকে লালনের বাড়ির অদূরেই তার স্ত্রী বেলী খাতুনের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএমসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ফার্মপাড়া ও হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একই পাড়ার নাজমা খাতুন নামের এক নারীকে থানায় নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেও ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলে পুলিশি আচরণ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে। লালন আলীকে হত্যা করায় বিএনপি ও ছাত্রদল পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফার্মপাড়ার খাদেমুল মাদরাসার অদূরেই এক ছেলে ও দু কন্যা নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন লালন আলী। মৃত আনোয়ার হোসেন আনারের ছেলে লালন আলী ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। যুবদলের নেতা হিসেবেও পরিচিত। তার প্রতিবেশী আব্দুর রবের ছেলে আলামিনের সাথে দুজনের বাড়ির সীমানায় থাকা একটি নারকেল গাছ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। উভয়ই নারকেলগাছটি তাদের বলে দাবি করলে নালিশ পৌছুয় পৌরসভায়। পৌরসভা থেকে স্থানীয়ভাবে মিটমাট করে নেয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়। সেমতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর উভয়পক্ষের বসার কথা ছিলো। সন্ধ্যার পর আলামিন তার পক্ষের লোকজনকে সাথে নিয়ে লালন আলীকে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে। বাড়ির অদূরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হামলাকারীরা সরে পড়লে তাকে তার নিকটজনেরা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কানিজ নাঈমা জানান, হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা গেছেন রোগী। কান্নায় ভেঙে পড়েন লালনের স্ত্রী বেলি খাতুন, ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহ, মেয়ে সিনথিয়া ও লাবনীসহ নিকটজনেরা। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেলী খাতুন বলেন, সন্ধ্যার পর নিজেদের ঘরে বসে টিভি দেখছিলো। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে প্রতিবেশী আলামিন ডাক দেয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আলামিন, হাশেম, হাশেমের দু ছেলে টিপু, মিণ্টুসহ ১০-১২ জন মিলে লালন আলীকে কোপাতে থাকে। ঠেকাতে গেলে ওরা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এ সময় প্রতিবেশী আশাদুর রহমান মিলন ঠেকানোর জন্য ছুটে গেলে ওকেও ওরা মেরে আহত করে।
লালন আলীর মাথায় ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি কোপসহ সারা শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। গতরাতেই প্রাথমিকভাবে পুলিশ সুরোতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. কলিমুল্লা বলেন, বাড়ির জমির সীমানায় থাকা একটি নারকেল গাছ নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই ফার্মপাড়া ও হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। আসামিরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, দ্রুত তাদের ধরে আইনে সোপর্দ করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা ও যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুল হক মালিক মজু যুক্ত স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে খুনিদের ধরে আইনে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, লালন আলী ছিলেন ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। তাকে তার স্ত্রীসহ প্রতিবেশী মিলনের সামনে যেভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা মধ্যযুগিও নির্যাতনকেও হার মানায়। অভিন্ন মন্তব্য করে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। অপরদিকে ছাত্রদলের মোমিনুর রহমান মোমিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লালন আলী ছিলেন একজন যুবদল নেতা। তার ওপর হামলা চালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল নেতা ফিরোজ সরোয়ার রোমান, জাহিদ মো. রাজিব খান, শাহজানা খান প্রমুখ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লালন প্রবাসে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন এক ছেলে ও দু মেয়ের জনক। ছেলে আব্দুল্লাহ(৯) খাদেমুল ইসলাম মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। বড় মেয়ে সিনথিয়া এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে লাবণী ফার্মপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী।