চুয়াডাঙ্গার চ-িপুরে ভাত চাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া : উঠোনেই বিপত্তি
সরোজগঞ্জ/পাঁচমাইল প্রতিনিধি: দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরের দাম্পত্য। যে দম্পতি তাদের ৫ সন্তানকে মিলে মিশে বড় করে তুলেছে, যাদের এখন অফুরন্ত অবসর কাটানোর কথা তাদের জীবনের বাঁক আচমকা বদলে গেছে। স্ত্রীর ঝাটা পেটায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল হাকিম। স্বামীকে ঝাটা দিয়ে মেরে হত্যার পর পাড়া পড়শির সহযোগিতায় স্ত্রী সাহেরা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।
কয়েক বছর ধরে অসুস্থ জীবনযাপন করে আসা আব্দুল হাকিম গত বৃহস্পতিবার সকালে তার স্ত্রীর নিকট যখন ভাত চান, তখন স্ত্রী সাহেরা খাতুন উঠোন ঝাড় দেয়াসহ সংসারের খুটিনাটি কাজ নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত। ভাত চেয়ে না পেয়ে হাকিম তার স্ত্রীর ওপর লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। স্ত্রীও এক পর্যায়ে রুখে দাঁড়িয়ে মেঝাজ খিটখিটে স্বামীকে ঝাটাপেটা করতে শুরু করেন। ঝাটার উল্টো দিকের আঘাত মাথায় লেগে বাড়ির উঠোনেই লুটিয়ে পড়েন হাকিম।
স্ত্রীর ঝাটাপেটায় নিহত আব্দুল হাকিম চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের চ-িপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। প্রতিবেশীরা বলেছেন, আব্দুল হাকিম একজন বর্গা চাষি। মাঝে মাঝে তাকে দিন মজুরিও করতে হতো। কয়েক বছর ধরে হাকিমের বাম পা অষাড় হয়ে পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ রোগে প্যারালাইজড হলেও লাঠি ভর দিয়ে তিনি চলাচল করতেন। দু’ছেলের একজন চট্টগ্রামে অপর ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করে। তিন মেয়ে বিবাহিতা। ওরা নিজেদের সংসার নিয়ে নিজেদের মতোই থাকে। বাড়িতে হাকিম আর তার স্ত্রীর সাথে ছোট ছেলের স্ত্রী শিউলী থাকেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শিউলী খাতুন বলেন, ব্লাডপেসারের রোগী ছিলেন শ্বশুর। তিনি সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে স্ত্রীর নিকট ভাত চান। স্ত্রী হাতের কাজ শেষ করে খাবার দিচ্ছি বলতেই শ্বশুর বাঁশ দিয়ে আঘাত করে শাশুড়ির ওপর। শাশুড়িও রুখে গিয়ে ঝাটার উল্টো দিক দিয়ে আঘাত করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বশুর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে গ্রামবাসী সাহেরাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। স্থানীয় সরোজগঞ্জ ক্যাম্প ইনচার্জ শেখ মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতক স্ত্রী সাহেরাকে আটক করা হয়। আব্দুল হাকিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, বেলা আড়াইটার দিকে আব্দুল হাকিমের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ‘থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ মামলা হলে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।