সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই :কাদের
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্বাচনে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করতে পারে। গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমরা একেবারেই চাই না। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। আরও কমিশনাররা রয়েছেন। আমরা সবাই মিলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।
‘বাংলাদেশে প্রবাসী ভোটাধিকার প্রবর্তন: সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই আলোচনাসভার আয়োজন করে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচনী আইনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী না থাকায় এর বিপক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি যে আইন সংশোধনের খসড়া করেছে সেখানেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভূক্ত করেনি ইসি। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা সেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি। আমার মনে করি, কমিশন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী সারা দুনিয়ায় শান্তিরক্ষায় কাজ করছে, বিভিন্ন দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশের নির্বাচনে সেনাবাহিনী কাজ করতে পারবে না, এটা হয়না। সেনাবাহিনী থাকলে একটি পক্ষের অসুবিধা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের তো তাদের পক্ষ নেয়া উচিত হবে না।
সেনা মোতায়েন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার বক্তব্যের ব্যাপারে সিইসির বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন সিইসি সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে তার নিজের মত দেন। তবে এ ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
ওই সেমিনারে অংশ নিয়ে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। প্রবাসীদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে সিইসি বলেন, বর্তমানে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট থাকায় ১২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে কারাগারে কিংবা পুলিশ হেফাজতে থাকা আরও ৭৫ হাজার ভোটার ভোটের দিন ভোট দিতে পারেন না। এসব ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছি। সিইসি বলেন, আমাদের বিদ্যমান আইনে প্রক্সি ও পোস্টাল ভোট দেয়ার সুযোগ আছে। তফশিল ঘোষণার ১৫ দিনের ভেতর আবেদন করলে প্রবাসীরাও ভোট দিতে পারেন। তবে এটা অনেকেই জানে না। তিনি জানান, আগামী ১৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ভোট বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক নয়। এজন্য ভোট বর্জনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সভায় প্যানেল আলোচক সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন চৌধুরী বলেন, প্রবাসে যারা বাংলাদেশি আছেন তারা দেশের কাছ থেকে সম্মান প্রাপ্তির আশা রাখে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য আবদুল আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিমা ফেরদাউস, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী, এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সারাহ টেইলর।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হবে কি-না এটা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। তাও সেটা বাস্তব পরিস্থিতির প্রয়োজনে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কাজ করবে। কিন্তু সেনাবাহিনী থাকবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই ইসি চাইলেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারবে না। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, তারা (নির্বাচন কমিশন) সরকারকে শুধু অনুরোধ করতে পারবে। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজন মনে করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে। এ বিষয়ে সংবিধানে সব কিছু বলা আছে। কেউ চাইলেও সংবিধানের বাইরে যেতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা বেগম জিয়াকে নিয়ে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছিলেন। তাকে জোর করে হাসপাতালে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি হাসপাতালে যাওয়াতে অবশ্য একদিক থেকে সুবিধা হয়েছে। জাতি দেখেছে তিনি কতোটুকু অসুস্থ। তিনি বলেন, আমার তো মনে হয় তিনি জেলে যাওয়ার আগে যতটুকু সুস্থ ছিলেন, জেলে যাওয়ার পর আরও বেশি হাস্যোজ্জ্বল ও সুস্থ দেখাচ্ছে। তিনি সুস্থ থাকুন আমরা সেটা চাই।