আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস
স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুড়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এতে প্রায় একশ’ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত হন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিকও। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৭টায় পুলিশের এই অভিযানে কয়েক মিনিটের মধ্যে রাজধানী শাহবাগ মোড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারসহ ৫ দফা দাবিতে গতকাল রোববার বিকেল থেকে উত্তাল ছিলো সারাদেশ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সারাদেশে একই সময়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। অবরোধ করে রাজধানীর শাহাবাগসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক। বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। কাঁদানে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে চারুকলার সামনে ও ভেতরে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। আর পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে থেকে চারুকলা অনুষদ এলাকার দিকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কাঁদানে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে চারুকলার সামনের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালায় আন্দোলনকারীরা। পরে তারা মিছিল সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে যায়।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গিয়ে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনের যুগ্মআহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানসহ কয়েকজনের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করছিলো। আমরা তাদেরকে চলে যেতে বলেছি।’
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেছে ও কয়েকজনকে আটক করেছে। হামলায় তাদের অন্তত ১০০ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করে এর প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। দুপুর ৩টা থেকেই শাহাবাগ মোড়ে অহিংস অবরোধ পালন করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের ঘোষণা ছিল সংসদে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা। রাস্তা ছাড়বেন না তারা। এরপর সন্ধ্যা পৌনে টায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া শুরু করে পুলিশ।
গতকাল রোববার বেলা ৩টায় পদযাত্রা কর্মসূচির মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় শাহবাগ থেকে মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, দোয়েল চত্বর, সাইন্সল্যাব মুখী সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে দুপুর ২টায় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়। অন্তত দুই হাজার আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে পদযাত্রা করে নীলক্ষেত দিয়ে এসে শাহবাগে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের কয়েক দফা সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে এবং তাদের ওপর হামলা হলেও তারা স্থান ত্যাগ না করবে না বলে জানায়। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করে। এতে লেখা ছিলো ‘১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়’,‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই’,‘কোটা প্রথা নিপাত যাক,মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, অবিলম্বে সরকারি চাকরিসহ সকল ধরনের চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। কোটা প্রথার সংস্কার ছাড়া আন্দোলনকারীরা রাজপথ ছাড়বে না।
অন্যদিকে গতকাল মিরপুর সড়ক বন্ধ করে রাখে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর থেকে দুই নম্বর গেট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত দীর্ঘপথ হেঁটে কোটা সংস্কারের দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা স্লোগান দেয়। এ সময় সেখানে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ময়মনসিংহের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টায় রাবির প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে কয়েকশ শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসক অবরোধ করে। দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদালয়, কলেজ ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে চাকরি প্রত্যাশীরা।