স্টাফ রিপোর্টার: ভরা চৈত্রে এখনো সূর্যের তেজ তেমন দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও মার্চ মাসে দেশের কোথাও ঝড়, কোথাও বা হয়েছে হালকা বৃষ্টি। দুপুরে কিছুটা রোদ পড়লেও সকাল বা বিকেলে আকাশে ছিলো হালকা মেঘ। সঙ্গে হালকা দখিনা বাতাস। দাবদাহের পূর্বাভাস আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হলেও সেটি কেবল ছিলো ১৪ মার্চ। তা-ও আবার যশোর জেলায়, যার মাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার মতিগতি কি এমনই থাকবে এপ্রিল মাসজুড়ে? মাসের প্রথম ভাগে তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদেরা। তবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে আকাশ-বাতাস-সূর্যের চরিত্র বদলে যেতে পারে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন হবে আবহাওয়ার চরিত্র?
আবহাওয়া অধিদফতরের এপ্রিল মাসের পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে, গত ৩০ বছরের হিসেবে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়ে থাকে ১৩০ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে এবারের এপ্রিলে এর চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির সঙ্গে কালবোশেখিও বয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চলে প্রায় আটদিন কালবোশেখি দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
এপ্রিলে ঝড়-বৃষ্টি হবে, কিন্তু গরম পড়বে না; তা কি হয়! দাবদাহেরও পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর। তাদের তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে তিনটি দাবদাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দাবদাহের প্রভাবে তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাকি দুটি দাবদাহের মাত্রা থাকবে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দাবদাহের মাত্রা বেশি থাকলেও উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে সারা দেশ।
প্রকৃতিতে উত্তাপ ছড়ালে উত্তাল হয়ে উঠতে পারে বঙ্গোপসাগর। তাই এপ্রিল মাসে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা জানানো হয়েছে ১ এপ্রিল আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মার্চ থেকে মে মাসে সূর্য কিরণ সরাসরি এ দেশের ওপরে পড়ে। এই সময়কে গ্রীষ্ম মরসুম বলা হয়। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে সূর্য কিরণের তেজের জন্য ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত থাকে। গ্রীষ্ম মরসুমে সূর্যের কিরণ দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বেশি তির্যকভাবে পড়ে। এর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে আসে। এই বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এর সঙ্গে আরব সাগরের দিক থেকে আসা বাতাসেও থাকে জলীয় বাষ্প। সে কারণে চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী ও রংপুরের মতো উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কম পড়ে। তবে সাগর থেকে আসা বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল অঞ্চলে অস্বস্তি বেশি অনুভূত হয়। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা বাতাস মিশে গেলে কালবৈশাখী, বজ্র মেঘ, শিলাবৃষ্টি হয়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের দিকে কালবোশেখি বেশি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, সাগর উত্তাল হয়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি সহজ কারণ হলো, এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা বেশি থাকে। তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এই লঘুচাপ পরে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে রূপ নেয়। তবে এবার এপ্রিল মাসে একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টি না-ও হতে পারে। কারণ এখনো পর্যন্ত তাপমাত্রা খুব একটি বৃদ্ধি পায়নি। কারণ আরব সাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ দিকের বাতাস বয়ে গেলে বুঝতে হবে তাপমাত্রাও বাড়বে। এই বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকে। জলীয় বাষ্প থাকলে শরীরে অস্বস্তি বোধ হয়। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাস আসা শুরু হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো মংলায় ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় ছিলো ৩১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল এদিকে গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে বগুড়ার তাড়াশে ৪৪ মিলিমিটার।