ঝিনাইদহে এবছরও গমে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ : হতাশায় কৃষক

উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা সত্ত্বেও চাষাবাদ : সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় কৃষি বিভাগ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের গম ফসলে এ বছরও ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। সে কারণে ব্যাপকভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন জেলার কৃষকরা। দিনে গরম আর রাতে শীত, তাপমাত্রার গড়ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ গড়মিল রয়েছে। যে কারণেই এই রোগের আক্রমণ বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কৃষকরা জানান, দূর থেকে গমের ক্ষেত দেখে মনে হচ্ছে গম পেকে গেছে আর কয়েকদিন পরই কাটা যাবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টা। গম গাছগুলো রোগে শুকিয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর সরকারিভাবে গমের বিজ সরবরাহ ও সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। এরপরও কৃষকরা নিজেদের রাখা বিজে গমের আবাদ করেছেন। গমের ব্লাস্ট নামক ছত্রাক প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে বিশে^ প্রথম ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দেয় ব্রাজিলে। পরবর্তীতে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই সে দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থার কারণে আর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে ২০১৬ সালে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার মাঠে গমের আবাদে ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। সে সময় মাঠ পর্যায়ে হুমুড় খেয়ে পড়েন কৃষি বিজ্ঞানি ও আন্তর্জাতিক গম গবেষণা বিজ্ঞানীরা। গমে ব্লাস রোগ নির্ণয় করার পর জেলায় হাজার হাজার একর গম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে জেলার ৬ উপজেলায় ২৬শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২শ’ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১শ’ ২০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৩০ হেক্টর, মহেশপুরে ২শ’ ২০ হেক্টর, শৈলকুপা উপজেলায় ১৯শ’ ৪০ হেক্টর, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। সরেজমিন জেলার মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া মাঠে দেখা যায়, মাহাতাপ উদ্দিন, নুর জামাল, বিশারত আলী, রশিদুল ইসলামসহ একাধিক কৃষকের গম ক্ষেতগুলো শুকিয়ে গেছে। এছাড়াও পাশের গম ক্ষেতগুলোতে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। কথা হয় গমচাষী রশিদুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, মাঠে গমের ক্ষেতে সমস্যা হলেও আমাদের মাঠে পূর্বে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। এবছরই রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাষানপোতা গ্রামের আক্কাচ আলী জানান, দূর থেকে গমের ক্ষেত দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গেলেই দেখা মিলছে রোগের আক্রমণের কারনে গম গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, কৃষকরা নিজেদের রাখা বিজ দিয়ে গমের আবাদ করেছেন। যারা আবাদ করছেন তাদের ফসল সম্পর্কে কৃষি বিভাগ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। তাদের প্রতিশেধক দেয়ার জন্য কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলার কোথাও এবছর ব্লাস্ট রোগের আক্রম দেখা গেছে এমন সংবাদ এখনও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেসবাহ আহমেদ জানান, নিজ উদ্যোগে জমিতে কৃষকরা গমের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন ছত্রাক নাশক স্প্রে করানো হয়েছে। তবে এ বছর এ ব্লকে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন হয়নি। ফলনও বেশ ভালো হবে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ বিএডিসি’র ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সফিউদ্দিন সবুজ জানান, ঝিনাইদহে গম আবাদে ব্লাস্ট রোগ দেখার পর গত ক’বছর বীজ সংগ্রহ বন্ধ ও বিতরণ করেছে না বিএডিসি। একই সাথে কৃষি বিভাগ কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করছেন। এরই মধ্যে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন থেকে রেহায় পেতে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্বোধন করা হয়েছে। যা বারি গম-৩৩ নামের একটি বীজ জাতীয় বীজ বোর্ড এ মরসুমে অনুমোদন দিয়েছে। খামার ও কৃষি খামারে প্রদর্শনের মাধ্যমে আবাদ হচ্ছে। আগামী বছর থেকে এই বীজ কৃষকদের মাধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এরপরও যে সকল কৃষক নিজেদের রাখা বীজে গমের আবাদ করেছেন। সেসব কৃষকের গমের ব্লাস্ট নামক ছত্রাক প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে গমে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।