বক্করের মেধা ও স্বপ্ন লোহার শিকলে বন্দি : অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

?

চুয়াডাঙ্গা সড়াবাড়িয়া গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবি ছাত্র বক্করের মতিষ্ক বিকৃতিতে হলো না অনার্স পড়া

নজরুল ইসলাম : অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না মেধাবী ছাত্র আবু বক্করের। দিনমজুর খেটে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে অনার্স ভর্তি হয়ে মানষিক ভারসাম্য ঘটে বক্করের। মা বাবা স্বপ্ন দেখেছিলো ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে তা ভেঙে চুরমার করে দিলো বাবা-মায়ের স্বপ্ন। বক্করের মেধা এবং স্বপ্ন বাধা পড়েছে লোহার শিকলে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর হতদরিদ্র মুছা করিমের ১ ছেলে ২ মেয়ে। একটি মাটির দেয়ালের টিনের ভাঙা ঘরেই পরিবারের বসবাস। যেখানে মাথা গোজার ঠাঁই মেলায় ভার সেখানে আবার লেখাপড়া তো আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মতো। তবুও অদম্য মেধা ও ইচ্ছে শক্তিকে পুজি করে দরিদ্রতার করাল গ্রাসে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে পিতার সাথে দিনমজুর খেটে গ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে বক্কর।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আবুবক্কর যখন দশম শ্রেণির ছাত্র তখন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১০ সালে মা খোদেজা বেগম পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। ২০১১ সালে এসএসসি পাশ করে সে। ২০১৩ সালে মানবিক বিভাগে লেখাপড়া করে এইচএসসি পাশ করে। ২০১৩-১৪ সেশনে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়ার জন্য ঢাকা গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ আইডিয়াল স্পিনিং মিলস লিমিটেডে দিন হাজিরায় সহকারী ফিটার পদে কাজ শুরু করেন। ঠিকঠাক চলছিলো বক্করের। সবকিছুর হিসাব নিকাশ এলোমেলো হয়ে যায় তার। ২০১৬ সালে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে তার। এরপর থেকে লোহার শিকল পড়ে তার পায়ে। যখন মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে তখন বাড়ির জিসিপত্র ভাঙচুর এবং বাবাকে মারধর করে। আবার কিছু সময় সুস্থ থাকলে স্বাভাবিকভাবে কখনও বাংলায় আবার কখনও ইংরেজিতে কথা বলে। বুধবার বিকেলে বক্করদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চৌকির পায়ার সাথে লোহার শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। দেখেই হাসিমুখে লম্বা করে সালাম দিয়ে বসতে বলে। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে আমার যে কি হয়েছে বলতে পারবো না। তবে আমি লেখাপড়া করতে চাই। সামনে আমার পরীক্ষা। অথচ আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমি যেতে না পরলে পরীক্ষা দেবো কি করে? আমি শুধু বাংলা ইংরেজিই না কোরআন শরিফের ১১৪টি সুরার মধ্যে ৩৫টি সুরা মুখস্থ। বিশ্বাস না হয় ধরে দেখেন। প্রতিবেশিরা জানালেন, পৌনে তিন কাঠা ভিটে জমি ছাড়া কিছুই নেই। অর্থাভাবে বক্করের চিকিৎসা হচ্ছে না। বক্কর গ্রামের মধ্যে একজন ভালো ছেলে। তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। কোথা থেকে যে কি হলো বুঝতে পারছি না। সন্তানের এ অবস্থা দেখে চোখের কোন বেয়ে জল গড়াচ্ছে পিতা মুসা করিমের। শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, শিকল খুলে দিলেই তাকে আর ধরে রাখে কে। সব কিছু তছনচ করে ফেলবে। তাইতো ঘরের মধ্যেই এক পোশাকে গোসল এবং খাওয়া-দাওয়া করাতে হয়। কোনো পিতা কি চাই তার ছেলে শিকলে বাঁধা থাক। পিতা হিসাবে এযে কি কষ্টের তা বোঝানো যাবে না। অর্থের অভাবে সহধর্মীনিকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে ছেলের এ অবস্থা এখানেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন আনি দিন খাই। বিক্রি করার মতো কিছুই নেই যে তা বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করাবো। কান্নায় ভেঙে পড়ে আর কিছুই বলতে পারলেন না মুছা করিম। এভাবেই কি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে বক্করের পিতার স্বপ্ন ও সাধ। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে দরিদ্রতার কষাঘাতে হারিয়ে যাবে মেধাবী একটি মুখ। সমাজের হৃদয়বান বিত্তবানরা এগিয়ে এলেই পূরণ হতে পারে দরিদ্র পিতার স্বপ্ন। আলোর মুখ দেখবে মানষিক ভারসাম্যহীন বক্কর। সমাজে কেউ কি নেই বক্করের চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার?