দুদকের তদন্ত আতঙ্কে রাজীনীতিকরা

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত-আতঙ্কে রয়েছেন রাজনীতিবিদরা। দুর্নীতি প্রতিরোধে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দুদক। অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডাকা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ ১০ নেতার ব্যাংক লেনদেনের হিসাব-নিকাশ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। এমনকি সরকারি দলের বর্তমান এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুদক কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন এমপিকে তলব করা হয়েছে। আরও তিন এমপি ও দুই নেতার বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চলছে। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির দুইজন এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরে দুর্নীতির বিষয়ে নজর রাখছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে বর্তমানে গ্রেডিং পদ্ধতিতে তারা তদন্ত করছে। এ ক্ষেত্রে কে কোন দলের তা দেখার সুযোগ নেই। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৫ ভাগ গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতে তদন্তকাজ শুরু করে দুদক। সেই সঙ্গে নির্বাচনী হলফনামা এবং বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করেই অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে তারা। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় পাচ্ছেন না সরকারি দলের এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও দুদকের অবস্থান অনমনীয়। জানা গেছে, প্রভাবশালীদের সম্পর্কে দুদক তথ্য নিচ্ছে রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন অধিদফতরসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে। এ ছাড়া সাবেক ও বর্তমান এমপিদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকেও তথ্য-উপাত্ত নিচ্ছে দুদক। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে মাঝেমধ্যেই চিঠি দেওয়া হয়। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে দুদকের জালে পড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাও। দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পড়ছে তাদের। এরা হলেন ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার লিমিটেডের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান। দুদক কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনের পরপর দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের। আর তদন্ত চলমান রয়েছে সাবেক গণপূর্ত ও গৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির বিভিন্ন অনিয়মের। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, জাপা নেতা নীলফামারী-৪ আসনের এমপি মো. শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিদেশে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন নাশকতায় অর্থ লেনদেন করা বিষয়ে একটি অভিযোগ দুদকে আসে। এ বিষয়ে দুদক বিএনপির যেসব শীর্ষ নেতার লেনদেন তদন্ত করছে তারা হলেন— স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোরশেদ খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল। একই অভিযোগ আসায় মোরশেদ খানের ছেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল মোরশেদ খান এবং ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের বিষয়েও অনুসন্ধান করবে দুদক। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দেখছি দুদক সরকারের এমপি, প্রভাবশালী নেতাসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনছে। তবে দেখার বিষয়, তারা কীভাবে এর সমাধন করে। আশা করছি দুদক বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করবে। এ ক্ষেত্রে কে কী বললো তা দেখার বিষয় নয়।’