টেস্ট বাণিজ্যের লাগাম টানতেই হবে

বিনা প্রয়োজনে রোগীদের মেডিকেল টেস্ট না দিতে চিকিৎসকদের প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আহ্বান সময়োপযোগী। চিকিৎসার নামে এ ধরনের হয়রানি বন্ধের স্পষ্ট বার্তা প্রদানের জন্য তিনি উপযুক্ত ফোরামকেই বেছে নিয়েছিলেন। গত শনিবার বাংলাদেশ চিকিৎসক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। এটা ঠিক যে, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ে মেডিকেল টেস্ট খুবই সহায়ক। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক উদ্ভাবনের সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। তবে অর্থনৈতিক কারণে এ সুবিধা সবার কাছে সমভাবে পৌঁছুনো সম্ভব হয় না। বিশেষভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ সমস্যা আরও তীব্র হয়, যখন চিকিৎসকরা অনেক ধরনের পরীক্ষার নিদান দেন। এমনকি সাধারণ সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রেও বহুবিধ পরীক্ষার কথা বলা হয়, যা অনেকের জন্য দুঃসহ বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এটা ঠিক যে, পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা গেলে নিরাময় কাজ সহজ হয়। হয়তো ব্যয়বহুল পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে জানা গেল, স্বল্প মূল্যের একটি ওষুধেই রয়েছে প্রকৃত নিরাময়-সূত্র। কিন্তু মেডিকেল টেস্টকে কমবেশি সব চিকিৎসক বাড়তি উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করছেন, এমন অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। সংবাদপত্রে নিয়মিত শিরোনাম দেখি- ‘যতো টেস্ট ততো বাণিজ্য’। এ বাবদ আয় ভাগাভাগি হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রোগী পাঠানো চিকিৎসকের মধ্যে। বেশিরভাগ চিকিৎসক কোনো প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে দেন। চিকিৎসক বদল করে নতুন কারও কাছে গেলে, সেখান থেকে একই ধরনের পরীক্ষা নতুন করে করানোর কথা বলা হয়। এমন অভিযোগও বিরল নয় যে, একই বিষয়ে পরীক্ষার ফল বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ভিন্ন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের সরঞ্জাম ও রাসায়নিক ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মনগড়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এ ধরনের ‘টেস্ট বাণিজ্য’ বন্ধে বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কড়া নির্দেশ জারি করেছে। র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও মাঝে মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু প্যাথলজি ব্যবস্থার লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। লাভের অঙ্ক যেহেতু অনেক বড়, তাই সাইনবোর্ড-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। শহর ছাড়িয়ে এখন সুদূর গ্রামেও গড়ে উঠছে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থা। এ ধরনের টেস্ট বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও বেশি উদ্যোগ কাম্য। পরিস্থিতি কতোটা উদ্বেগজনক, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকেও এ ব্যাপারে জরুরি উদ্যোগ থাকা চাই। অভিযোগের তীরের লক্ষ্য প্রধাণত কিন্তু চিকিৎসকরাই।