গাংনীতে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এমপি ও কৃষি কর্মকর্তা ॥ সহায়তার আশ্বাস

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। একদিকে মাঠের ফসলের ক্ষতি অপরদিকে ঘরবাড়ির ক্ষতি নিয়ে বিপাকে অনেকেই। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন।
শনিবার বিকেলে উত্তর-পুর্ব আকাশে আকস্মিক কালো মেঘে ছেয়ে যায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চৈত্র মাসের কালবোশেখী ঝড় হানা দেয়। ঝড়ের সাথে সামান্য কিছু বৃষ্টিপাত হয়। এক পর্যায়ে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিটব্যাপী শিলাবৃষ্টিতে মটমুড়া, বামন্দী ও কাজিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ’ ঘরের টিন ছিদ্র হয়। একই সাথে ক্ষতি হয় মাঠের উঠতি ফসল তামাক, ভুট্টা, বেগুন, গম ও কলার। অপরদিকে শিষ বের হওয়া বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। শিলাবৃষ্টির আঘাতে তামাকের পাতা টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তামাক গাছে ডাটা ছাড়া পাতার দেখা নেই। বোরো ধানের অনেক ক্ষেতে থোড় ভেঙে গেছে।
এদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে শুক্রবার বিকেল থেকেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে পাঠিয়েছিলেন উপ-পরিচালক। গতকাল শনিবার দিনব্যাপী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মাঠে মাঠে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত পরিদর্শণ করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
অপরদিকে, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন নেতৃবৃন্দ সঙ্গে নিয়ে আকুবপুর, মটমুড়া, মহাম্মদপুর, রামনগর, বেতবাড়ীয়া, ভবানীপুর, হাড়াভাঙ্গা ও ব্রজপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি ও ক্ষেত পরিদর্শণ করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে সহায়তা কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, প্রাকৃতিক ক্ষতি আসলে কখন আসবে তা বোঝা যায় না। তবে দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের সরকারের আছে। এই সরকারের সময়ে কেউ খারাপ থাকবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের সবার সাথে দেখা করতে না পারায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জেলা, উপজেলা প্রশাসন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় ও কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা ছাড়াও বাড়তি সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত পূর্বক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পরিদর্শণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি একেএম শফিকুল আলম, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা মমতাজ কাকলী, আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল শাহ, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ ও যুবলীগ নেতা সাইফুজ্জামান সিপু প্রমুখ।
ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদেরকেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ জানান, হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর ঝড়ের গতি কমার সাথে সাথে শুরু হয় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এ সময় কিছু কাঁচা ও সেমি পাকা বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। সেসব ঘর এখন বসবাসের অযোগ্য। মাঠের ফসল কেউ ঘরে আনতে পারেনি।
জানা গেছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, শিলার গড় ওজন ছিলো ২০০-৩০০ গ্রামের মতো। এতোবড় আকৃতির শিলা অত্র অঞ্চলের মানুষজন আগে কখনও দেখেননি বলে আমাদের জানিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার জন্য গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে কিছু ফসল রিকভার করবে। চুড়ান্ত ক্ষতির বিষয়টি জানতে সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল পূর্বক কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।