সন্ত্রাস শুধু শান্তি-স্বস্তিই বিঘিœত করে না, উন্নয়নেও অন্তরায়

সরকারি কর্মকর্তাই বলুন আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীই বলুন, সমাজের স্বার্থে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। অবশ্যই সকল কর্মকর্তার মানসিকতা সমান নয়, সকলেই নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে মেতে ওঠেন না, উৎকোচেও অন্ধ হন না। চাক্ষুস অনিয়ম দূরের কথা নিয়মের কোনো রকম বর্তায় ঘটাতেও রাজি হন না অনেকে। এরকম কর্মকর্তাদেরই একজন সাহজাহান কবির। তিনি মেহেরপুর গাংনীর বানিয়াপুকুরের কৃতিসন্তান। চুয়াডাঙ্গাতেও পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক পদে বেশ কিছুদিন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি বগুড়ায় একই পদে কর্তব্যরত। গতপরশু বৃহস্পতিবার তিনি কর্মস্থল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে বগুড়ারই একটি বাসস্ট্যান্ডের অদূরে নগ্ন হামালার শিকার হন। তাকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। তিনি দ্রুত সুস্থতা ফিরিয়ে পাক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক প্রকৃত দোষী তথা হামলাকারীদের।
সন্ত্রাসী কোনো দলের নয় বলে বড় বড় নেতাদের অনেকেই বক্তব্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর তাগিদ দিলেও কোনো কোনো নেতাই যে ওদের প্রশ্রয় দাতা তা অস্বীকার করা যায় না। বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে পুলিশ, তাদের সাথে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে। একজন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তার ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। হামলাকারীরা কোনো কারণে পার পেলে অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা দেশ জুড়ে সংক্রমিত হতে পারে। যা জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। এমনতিই সকল কর্মকর্তা সঠিক অবস্থানে রাখার মতো পরিবেশ গড়তে পারিনি আমরা, এরপর যদি ভয়ের কাছে কর্তাদের আত্মসমর্পণের মতো পরিবেশ গড়ে ওঠে তা হলে এ জাতি কি সভ্য বলে দাবি করার এখতিয়ার রাখবে? সন্ত্রাস সমাজের ভয়ানক ব্যাধি। এ রোগ নিরাময়ের দাওয়ায় সমাজের চিকিৎসক তথা নেতাদের নিশ্চয় অজানা নয়।
সাহজাহান কবির একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তার স্ত্রীও সরকারি কর্মকর্তা। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে উপজেলা পর্যায়ের তদারকির দায়িত্বে। চুয়াডাঙ্গাতেও এক সময় ছিলেন তিনি। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। স্বামী-স্ত্রী দুজনের কর্মস্থল দুপ্রান্তে হলে মানসিক তৃপ্তিতে ঘাটতি থাকেই। বগুড়ায় সহকারী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করে সপ্তাহের দুদিনের ছুটির পূর্বদিন বৃহস্পতিবার তিনি অফিসের কাজ শেষে স্বজনের কাছে ফিরছিলেন। নিরাপত্তা নিয়ে তিনি তেমন সন্দেহ করেননি বলেই বোধ হয় পুলিশের সহযোগিতা চাননি। তাছাড়া সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের সকলেই তো আর বিশেষ নিরাপত্তা পান না। সকলকে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়াও কি সম্ভব? তবে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব তখনই যখন সন্ত্রাসী কর্মকা- করে সে যেই হোক ছাড় পাবে না। কেউ কেউ ছাড় পায় বলেই সন্ত্রাস মাথাচাড়া দেয়। অথচ সন্ত্রাস শুধু শান্তি-স্বস্তিই বিঘিœত করে না, সকল উন্নয়নে অন্তরায়।