প্রযুক্তির ধকল প্রজন্ম সহ্য করতে পারছে না? নাকি প্রজন্মের প্রজ্ঞায় বড্ড ঘাটতি? ইয়ারফোন কানে গুঁজে রাস্তায় ও রেললাইনে হাঁটতে গিয়ে একের পর এক জীবন বিপন্নের খবরে এসব প্রশ্ন এখন খুবই সঙ্গত। সেলফোনে নিজেই নিজের ছবি বা সেলফি তুলতে গিয়েও জীবন বিপন্ন হওয়া তরুণের সংখ্যাও কম নয়। তাছাড়া সেলফোনের মাধ্যমে প্রস্তাব পৌঁছুনো সহজলভ্য হওয়ার কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে বিপথগামীতাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে ওদের রক্ষার দায়িত্ব কাদের? অবশ্যই বর্তমান দায়িত্বশীলদের। দরকার সচেতনতা।
তথ্য প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরো পৃথিবীটাকেই বদলে দিয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বুদ্ধিদীপ্ততায় কোনো অঞ্চলের মানুষ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আকাশ সংস্কৃতি ন্যূনতম সহানুভূতি দেখাতে প্রস্তুত নয়। যে অঞ্চলের মানুষই হওনা কেন, আয়োডিন বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে বুদ্ধিদীপ্ততায় যতোটাই পিছিয়ে পড়ো না কেন, প্রযুক্তির ধকল সামলাতে না পারলে হাস্যরসেরই খোরাক হতে হবে। কানে ক্ষুদ্র মাইকগুঁজে রেললাইনের ওপর বসে বা রেললাইনের ধরে হাঁটতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পতনের দৃশ্য যতোটাই বেদনাদায়ক হোক না কেন, সেটাও কি বুদ্ধিদীপ্তদের দৃষ্টিতে হাস্যকর পতন নয়? তাছাড়া নিজস্বি তুলতে গিয়ে উল্টে আছড়ে প্রাণ হারানোর মধ্যেও বুদ্ধিমানেরা কৌতুক রস খুঁজে পান। এরপরও কি প্রজন্ম সতর্ক হবে না? নিজেকে বড় বুদ্ধিমান ভাবার চেয়ে নিজেকে সামলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারাটাই বুদ্ধিদীপ্ততা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, যে উপত্যকায় অতো উগ্রতা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে অতোটা সহজলভ্যতার দখল প্রজন্ম সহ্য করতে পারবে না, সে অঞ্চলে কেন খোলা হলো বিশ্ব দেখার জানালা? এ প্রশ্নের জবাবও প্রস্তুত- বদ্ধ জানালা কোনোদিনই কোনো জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। আনে না।
না, ভৌগলিক কারণে আমরা তথা দক্ষিণ এশিয়া অতোটা বোকার রাজ্য নয়, যতোটা বোকার সন্ধান মেলে উজবুকীয় বা অন্য অঞ্চলে। মাটিও উর্বর। গাছে প্রাণ আছে, অংকে দশমিক ও শূন্য আবিষ্কার যে অঞ্চলের মানুষের মাথা থেকে সেই অঞ্চলের মানুষকে প্রজ্ঞায় পিছিয়ে পড়া বললে বোকারাও মানবে না। তা হলে একজন কলেজছাত্র হয়েও কানে মাইকগুঁজে রেললাইনের ওপর বসে গান শোনার মতো বোকামি কেন? কী করলে কী হবে তা না বুঝতে পারাটা শুধু বোকামিই নয়, অন্যের হাস্যরসের খোরাক হওয়ার মতো পতনও অনিবার্য করে তোলে। যেমনটি গতপরশু চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে কানন নামের এক যুবকের মর্মান্তিক পতন হয়েছে। যে কানন সম্মান শ্রেণির শেষবর্ষের ছাত্র সে যখন কানে ক্ষুদ্র মাইকগুঁজে রেললাইনের ওপর বসে গান শোনে তাকে আর যাই হোক সচেতন বলা চলে কি? যদিও তার শিক্ষা সনদগুলো পর্যালোচনা করলে মেধাবী না বললে ওর ওপর অনেকটা অবিচারই করা হবে। যদিও একাডেমিক সনদ বা পাবলিক পরীক্ষাসমূহে প্রাপ্ত নম্বরই মেধার মূল স্বীকৃতি নয়। কানে ইয়ারফোন তথা ক্ষুদ্র মাইকগুঁজে রাস্তায় হাঁটা ভুল। উঠতি বয়সীদের ভুল দেখেও অনেকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারান উগ্রতায় অপদস্থতাসহ নানা কারণে।
শুধু উঠতি বয়সী নয়, সববয়সেরই কেউ কেউ কখনো কখনো কারণে অকারণে আত্মভোলা হয়ে উঠতেই পারে। সতর্ক করার দায়িত্ব আশে পাশে থাকা অন্যদের। একজনের ভুল দেখেও অন্যজনের অন্যদিকে তাকিয়ে দায় এড়ানোর অপর নাম দায়িত্বহীনতা। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের জন্য কিছু করা মানেই অন্যের জন্য করা। যা সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে। শুধু কানন নয়, বাড়ির বাইরে কানে ইয়ারফোন গুঁজে দেশের উঠতি বয়সী অনেকেরই ঝরে যেতে হয়েছে। যার আড়ালে বোকামি বা উদাসীনতা তথা অসতর্কতা লুকিয়ে। ফলে সাবধান !