চুয়াডাঙ্গার পাসপোর্ট অফিসের সাবেক এডি মেহেরপুরের সন্তান সাহজাহান কবিরকে বগুড়ায় ক্ষতবিক্ষত করেছে দুর্বৃত্তরা

চুয়াডাঙ্গা পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী পরিচালক মেহেরপুর গাংনীর সন্তান সাহজাহান কবিরকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাকে প্রথমে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ও পরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত আছেন। গতকাল কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে হামলার শিকার হন। পাসপোর্ট অফিসের এডি সাহজাহান কবিরের স্ত্রী নাহিদা আক্তার চুয়াডাঙ্গা প্রাথমিক শিক্ষা এটিও হিসেবে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, মেহেরপুর গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামের জোয়াদ আলীর ছেলে সাহজাহান কবির চুয়াডাঙ্গা পাসপোর্ট অফিসের এডি হিসেবে বেশ কিছুদিন সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় একই পদে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পাসপোর্ট কর্মকর্তা সাহজাহান কবির গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে খান্দার এলাকার অফিস থেকে রিকশায় বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ি এলাকায় ৩-৪ জনের একদল দুর্বৃত্ত পথরোধ করলে তিনি দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বন বিভাগের কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে তার মাথা, ডান হাত ও পায়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, সাহজাহান কবিরের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত ছিলো। তারপরও পাসপোর্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকায়।
বগুড়া পুলিশের ছিলিমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই আবদুল আজিজ ম-ল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার অফিস চলাকালে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এডি সাহজাহান কবিরের বাগবিত-া হয়। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসের কোয়ার্টার থেকে রিকশায় শাকপালা বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি কৈগাড়ি এলাকায় বন বিভাগের সামনে পৌঁছুলে ৩-৪ জন মুখোশধারী তার ওপর হামলা চালায়। প্রাণরক্ষায় তিনি দৌড়ে বন বিভাগের একটি রুমে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে দুর্বৃত্তরা তার মাথা, ডান হাত ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তার আর্তচিৎকারে পাশের একটি মসজিদ থেকে মুসল্লিরা বের হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে সাহজাহান কবিরকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার পর তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নেয়া হয়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সাহজাহান কবিরের ডান হাঁটু, ডান হাত এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে হাঁটু এবং হাতের জখম গুরুতর। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এডি সাহজাহান কবির খুব ভালো কর্মকর্তা। হামলাকারীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে এ হামলার কারণ ও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা জানা যায়নি। সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পার্শ্ববর্তী থানায় হলেও তারা হামলাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে মাঠে রয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার কারণ ও এর সঙ্গে কারা জড়িত সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু বলতে না পারলেও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, তাদের কার্যালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিলো। টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হতো না। জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হতো। সাহজাহান কবির সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর তিনি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেন। অফিসে জবাবদিহি বক্স স্থাপন করার পাশাপাশি অফিসকে দালালমুক্ত করেন। এতে আশপাশের প্রভাবশালী দালাল ও অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়। গত ২-৩ দিন আগে সরকারদলীয় স্থানীয় এক পৌর কাউন্সিলর দলবল নিয়ে অফিসে এসে এডিকে হুমকি দিয়ে যান। তাদের ধারণা, তারাই এ হামলার সঙ্গে জড়িত। এদিকে পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা পাসপোর্টের তদবির নিয়ে আসলে তা রাখেননি সাহজাহান। তারাই ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তৎকালীন চুয়াডাঙ্গার জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট কাজী সায়েমুজ্জামানের ফেসবুকে দেয়া পোস্ট সূত্রে জানা যায়, তিনি ছিলেন একজন উদ্ভাবনী, জনবান্ধব কর্মকর্তার। তিনি চুয়াডাঙ্গাতেও একসময় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে চাকরি করেছেন। এরপর তিনি কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েক জায়গায় সুনামের সাথে চাকরি করেছেন৷ সর্বশেষ সাহজাহান কবিরকে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন। তিনি অফিস দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিতে আসা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। সফলও হয়েছিলেন।
এছাড়াও তার অফিসের একটা অব্যবহৃত কক্ষকে মানবতার সেবার জন্য কাজে লাগিয়েছেন৷ সেখানে যে কেউ পুরাতন নতুন কাপড় গিয়ে রেখে আসতে পারতেন৷ গরিব মানুষ তাদের মাপ অনুযায়ী সেই কাপড় নিতে আসতেন৷ এ নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রশংসনীয় প্রতিবেদনও প্রকাশ পায়। আরও জানা যায়, বগুড়া পাসপোর্ট অফিসটি দালালের স্বর্গরাজ্য ছিলো৷ ২০১১ সালে এই অফিস থেকে পাসপোর্টের তিনশ বই গায়েব হয়ে যায়৷ পরে থানায় জিডিও করা হয়৷ তিনি দায়িত্ব নিয়ে গত বছরে ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছেন৷ সুনাম ফিরিয়েছেন অফিসটির৷ আমরা জানি, রোহিঙ্গারা দেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে৷ বগুড়া পাসপোর্ট অফিসেও তারা দালাল ধরে পাসপোর্ট করতে গিয়েছিলো৷ সাহজাহান কবির তাদের ধরে পুলিশে দিয়েছেন৷