পানি সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে

বাংলাদেশে আজ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পানির জন্য প্রকৃতি।’  প্রকৃতির জন্য পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা জানি। বিষয়টি উল্টো দিক থেকে দেখে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণের মাধ্যমে জাতিসংঘ সম্ভবত এই বার্তা দিতে চেয়েছে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা ছাড়া পানি সংকট মোকাবেলা কঠিন। পানি ও প্রকৃতির সম্পর্ক কী নিবিড় এবং একটি নষ্ট হলে অপরটির ভারসাম্য কীভাবে বিনষ্ট হয়, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বাংলাদেশ। গোটা দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নামছে। এর ফলে একদিকে যেমন সেচের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে ভূমিধস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতিমালা না মেনে গভীর নলকূপ বসানোর কুফল এই চিত্র। আবার দেশের নদনদীগুলোরও প্রবাহস্বল্পতায় ভোগার কারণে সেচের কাজে আসছে না। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানি মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে আর্সেনিক দূষণ। অন্যদিকে নদ-নদীতে প্রবাহস্বল্পতার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার হার বেড়েই চলছে।

সুপেয় পানির সংকট মোকাবেলায় ওই অঞ্চলে সরকারের পুকুর খনন প্রকল্পও ‘হোঁচট খাচ্ছে’। এর মানে নদীর দেশে পানি সঙ্কট এখন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, সুপেয় পানি ক্রমে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষত আমাদের রাজধানী ঢাকার পানি সংকট কতটা প্রকট, তা বোঝার জন্য এখন আর বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি গভীর নলকূপ থেকে পানির বদলে নুড়ি উঠছে। স্পষ্টতই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন বিড়ম্বনা। অবশ্য স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমান সরকার ঢাকা মহানগরীর পানি সংকট মোকাবেলায় নজর দিয়েছে।

নদীমাতৃক দেশে পানির সঙ্কট মেনে নেয়া যায় না। দেশের অধিকাংশ শহরই কোনো না কোনো নদীর তীরে অবস্থিত। সবগুলোতে যদি নদীর পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে আসবে। আর নগরের বাইরে সেচের কাজে নদীগুলোর সদ্ব্যবহার করতে প্রবাহ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।