বাল্যবিয়ের বলি হলো সম্পা : রেখে গেলো কিছু প্রশ্ন

চুয়াডাঙ্গার সড়াবাড়িয়ায় শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে বিষপান? না-কি হত্যা?

বেগমপুর প্রতিনিধি: বাল্যবিয়ে রোধে সরকার যখন সোচ্চার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বাল্যবিয়ে রোধে রয়েছে তৎপর। ঠিক তখনই নিষ্ঠুর বাল্যবিয়ের বলি হলো চুয়াডাঙ্গা সদর সড়াবাড়িয়া গ্রামের ১৪ বছর বয়সী সম্পা খাতুন। সে তার শাশুড়ির মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষপান করেছে না-কি তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে দানা বেঁধেছে প্রশ্ন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া বসুতিপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে রানা (২৩) গত দু’মাস আগে বিয়ে করে ফুফাতো বোন সম্পার (১৪) সাথে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্পা স্ত্রী হয়ে ঘরে আসে রানার। রানা গ্রামের একটি ইটভাটাতে দিন হাজিরার কাজ করে। অভিযোগ উঠেছে রানা বাড়ি থেকে চলে গেলে শাশুড়ি পারভীনা বেগম সম্পার ছোটখাট ভুল ধরে মানসিক নির্যাতন করতো। নির্যাতন সইতে না পেরে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে শুকনা বিষপান করে সম্পা। আছর আজানের সময় সম্পার বমি হলে বিষের গন্ধ ছড়াতে থাকে। সম্পার অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে রাত ৮টার দিকে সম্পার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে সম্পার লাশ হাসপাতাল থেকে নেয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ভেস্তে দেয়। বর্তমানে সম্পার মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে বলে জানা গেছে। গ্রামসূত্রে জানা গেছে, সম্পা রানার তৃতীয় স্ত্রী। রানার প্রথমে গ্রামে এবং পরে তিতুদহ ইউনিয়নের হারদাচাঁদপুর গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। যেখানে তার একটি সন্তানও আছে। সর্বশেষ গত দু’মাস আগে ফুফাতো বোন সম্পার সাথে বিয়ে করে সে। প্রতিবেশীরা জানান, শাশুড়ি পারভীনা বেগমের কারণে রানার আগের দুটি স্ত্রীর মা-বাবারা তাদের মেয়েকে রানার নিকট থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এদিকে পারিবারিক অশান্তির কারণে ৫-৬ বছর আগে সম্পার মা মহেলা বেগম চোরকোল গ্রামের স্বামী চাঁন মিয়ার সংসার ছেড়ে দু’মেয়ে চম্পা ও সম্পাকে সাথে নিয়ে সড়াবাড়িয়া গ্রামে পিতার বাড়িতে চলে আসেন। অভাব অনটনের সংসারে দু’মেয়েকে বড় করে তোলেন মহেলা। ছোট মেয়ে সম্পার বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই ভাই নজরুল ইসলামের চাপাচাপিতে তার ছেলে রানার হাতে তুলে দেন। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ পরিবারের নারীদের মতামত উপেক্ষিত হয়ে থাকে। সে কারণে পুরুষের অনেক সিদ্ধান্তে ভুল হলে তা মেনে নিতে হয় নারীকে। সম্পা আত্মহত্যা করেছে না-কি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে? সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছে গ্রামবাসী। সম্পার মত আর যেন কাউকে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে জীবন দিতে না হয়।