প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্ত্মি দেয়ার সিদ্ধান্ত্ম:তালিকা হচ্ছে প্রস্তুত

অপরাধের ধরন অনুসারে শাস্ত্মি দেয়া হবে:শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেো ব্যবস্থা নেয়া হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিভিন্ন পক্ষের দাবি আর দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার পর প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। জড়িত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যদের শাস্তি দিতে কয়েকটি ক্যাটাগরি তৈরি করে অপরাধের ধরন অনুসারে শাস্তি দেয়া হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে অপরাধীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করার বিষয়টিও এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে তারা সংশয়ও প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য এর আগেও সরকার এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে শাস্তির কথা বলেছে। কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন দেখা গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় সবগুলো বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হলেও এখনো পর্যন্ত অপরাধীদের বড় কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এসব অপরাধীর শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে অপরাধীদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। গত রোববার পাঠানো ওই আদেশে সাত দিনের মধ্যে এ তালিকা প্রেরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে সব শিক্ষার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপা, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে জড়িতদের উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। এ সব সেক্টরে যারা জড়িত রয়েছে তারাও শাস্তির বাইরে থাকবে না বলে জানা গেছে। ফেসবুকের মাধ্যমে যে সব সংগঠিত চক্র প্রশ্নফাঁস করে মুহূর্তের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে তারাও এ শাস্তির আওতায় আসবে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে

জড়িতদের একটি অংশকে শনাক্ত ও আটক করেছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা ধরে শাস্তি দেয়ার চিন্তা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শাস্তির মধ্যে এমপিও (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অনুদান) বাতিল, স্থগিত করা এমনকি জড়িত শিক্ষকদের বরখাস্তের মতো চিন্তাও করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসএসসি পরীক্ষা চলার সময় যে ১৫৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক শিক্ষক রয়েছে। এরপরও সঠিক সংখ্যা ও জড়িত শিক্ষকদের বিস্তারিত তথ্য পেতে মন্ত্রণালয় বোর্ডগুলোকে আদেশ দিয়েছে। এছাড়া যে সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদেরও শাস্তি পেতে হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। যে সব শিক্ষার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের পরীক্ষা বাতিলসহ দুই বছরের জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে অভিযুক্তরা অপরাধের ধরন ভেদে জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ভোগ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুল হাসান (বেসরকারি মাধ্যমিক-১)  বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস বন্ধ করার জন্য যা যা করণীয় তার সবই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যে সব শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যেই বোর্ডেগুলোর কাছে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এ তালিকা হাতে পাবেন বলে আশা করছেন। অপরাধের ধরন ভেদে এ সব শিক্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র জানায়, রোববারের বৈঠকে জড়িত শিক্ষকদের এমপিও বাতিল, স্থগিত এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া জড়িত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিলসহ দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ এবং সরকারি অন্য কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধে যুক্তদের জেল ও জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শিক্ষাবিদ মহিতুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, দেরিতে হলেও যদি অভিযুক্তদের শাস্তি হয় তবে তার একটি প্রভাব অপরাধীদের ওপর পড়বে। এমনকি পরবর্তীকালে অপরাধে জড়িত হওয়া পূর্বে তারা একবার হলেও ভাববে। এ ছাড়া এটি সমাজের অন্যদেরও প্রভাবিত করবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে। কারণ এর প্রভাব সবচেয়ে কার্যকর হয়। এবার এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় আছে এমন একজন শিক্ষার্থী শেখ মোহাম্মদ রুবায়েত বলেন, পরীক্ষার সময় যখন প্রতিদিন প্রশ্নফাঁস হওয়ার খবর আসতো তখন পড়তে ভালো লাগতো না। তবে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় যারা প্রশ্নফাঁস করতো তাদের কিছুই হতো না। এখন যদি তাদের শাস্তি হয় তবে সে সময়ের কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হবে। এ শিক্ষার্থী শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশিস্নষ্ট সবারই প্রশ্নফাঁস যেন আর না হয় সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও আহ্বান জানায়।

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক লাভলী আক্তার বলেন, সরকার অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুনে ভালো লাগছে। এটাই প্রত্যাশীত। কিন্তু পরীক্ষার সময় সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিলো, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যুক্তরা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। এখন যদি তাদের শাস্তি হয় তবে মানুষের মনের সেই ধারণা হয়তোবা কিছুটা বদলাবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এটা যে, আগামীতে আর কোনো পরীক্ষায় যেন এমনভাবে প্রশ্নফাঁস হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা।