আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সামনে এখন দুই চ্যালেঞ্জ

খালেদা জিয়াকে কারামুক্তসহ সব নেতার মামলা মোকাবেলা : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সামনে এখন দুই চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা ও দ্বিতীয়ত, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীনরা বিএনপির প্রতি নমনীয় হবে না। উল্টো খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনাও দূরে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের এ কঠোর মনোভাব পরিবর্তন করে দাবি আদায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপির জন্য কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সব চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপির সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলের চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করে আনা। পরের চ্যালেঞ্জ হল সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য অনেক কাজই গুছিয়ে এনেছে দলটি। খালেদা জিয়া সবার মাঝে এলে মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তাই চেয়ারপারসনের মুক্তিই তাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে চেয়ারপারসনের কারামুক্তিকেই গুরুত্ব দিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এজন্য আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে। আইনের বিষয়টি নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে সিনিয়র আইনজীবীরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সেরে নিচ্ছেন হোমওয়ার্ক। নিু আদালত থেকে নথি আসার পর জামিন নিয়ে যেন আর কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক তারা। এ ব্যাপারে দলের পাশাপাশি সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শও নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এ পরামর্শের জন্য বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবী। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। সূত্র জানায়, আইনগত বিষয়ের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবেও নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ এবং লিফলেট বিতরণের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কারামুক্তির আগপর্যন্ত এভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি।

খালেদা জিয়ার কারামুক্তির মধ্য দিয়েই মামলার চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাবে না। আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করাও নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া যেসব মামলা চলমান সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

শুধু দলের চেয়ারপারসন নয়, মহাসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র অনেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও মামলার বোঝা বহন করছেন। এ ধরনের মামলায় অনেকগুলোর চার্জশিট দেয়ার পাশাপাশি বিচারকার্যও শুরু হয়েছে। অনেক নেতার আবার জামিনের মেয়াদও শেষপর্যায়ে। তাই নির্বাচনের বছরে প্রত্যেক নেতাকেই মামলা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সারা দেশে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নির্বিঘ্নে ভোটের মাঠে থাকার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। এটা তারা পারবে না। কারণ ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। সেই চ্যালেঞ্জই এখন আমরা মোকাবেলা করছি। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। তবে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি বসে থাকবে না।

তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পাশাপাশি এবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারও বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যা যা করার সবই করবেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির সামনে এখন দুই চ্যালেঞ্জ। একটি হলো দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা, আরেকটি আন্দোলন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই সরকার নানা ছলচাতুরী করছে। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার পথও দূরে ঠেলে দিয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকার মুখে যাই বলুক এবার ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করা সহজ হবে না। সব দলকে নিয়েই আগামী নির্বাচন করতে হবে। দেশের সুশীল সমাজসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও এমন মত দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে আগামীতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তার দেশ। তার এমন মন্তব্যে বিএনপিও কিছুটা আশাবাদী। এদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি। কয়েক দিন আগে এ সহায়তা চেয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কূটনৈতিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বাচন ইস্যুতে বৃহত্তর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় তারা।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর দলে বিপর্যয় আসবে বলে অনেকের আশঙ্কা ছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যেই এমন মন্তব্য করেছেন। কিন্তু চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানোর পর উল্টো ফল হয়েছে। বিপর্যয়ের পরিবর্তে দল আরও ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী এখন অতীতের চেয়ে আরও বেশি উজ্জীবিত। নেতাকর্মীদের এ চাঙ্গাভাব আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই নির্বাচনের আগে সংগঠন নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কেটে গেছে বলা যায়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবো। সেই চ্যালেঞ্জই এখন আমরা মোকাবেলা করছি।

তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চেয়ারপারসন মুক্ত না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একই সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।