ভাবতে পেরেছিলেন কি সাময়িক বরখাস্ত হবেন?

নগর বাউলের  স্রোতাপ্রিয় একটি গান আছে, ‘তুইকি কখনও জানতিস অতোটা দুঃখ পাবি?…..’ গানটির সুরেই সুর মিলিয়ে এখন বলতে দ্বিধা নেই, আপনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও কি ভাবতে পেরেছিলেন যে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হবেন? উত্থাপিত নানা অনিয়ম আর অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন প্রাথমিক তদন্ত করে। প্রমাণও মেলে। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তের অফিস আদেশপত্রে অবিলম্বে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পত্রস্থ হয়েছে এ খবর।
অবশ্যই এখন এ প্রশ্নটা আর অমূলক নয় যে, চুয়াডাঙ্গায় এখন পুকুর চুরি করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি যেই হোন না কেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে প্রমাণ মিললে অপরাধ কোনো কিছুতেই আড়াল করা যাবে না। অন্ততঃ চুয়াডাঙ্গায় বর্তমান জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ যতোদিন আছেন ততোদিন এ নিশ্চয়তা দেয়া যায় নিশ্চয়।
কোনো সমাজেই কোনো অনিয়ম একদিনে ব্যাপকতা পায় না। একজন অনিয়ম করেও পার পেলে তা সংক্রমিত হয়। অনিয়ম রোধে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যখন কোনো কারণে প্রভাবিত হয় তখন অনিয়মই হয়ে দাঁড়ায় নিয়ম। আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের বাসা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অবস্থা দৃষ্টে অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, অনিয়মই যেখানে দস্তুর সেখানে নিয়মের কথা বলাই অবান্তর। অনেকে ন্যূনতম মন্তব্য টুকু করতেও হয় অলসতার প্রকাশ ঘটান, না হয় ভয়ে ঝামেলামুক্ত থাকার প্রয়াসে আড়াল করেন নিজেকে। না, বর্তমান সরকার নিশ্চয় দেশকে অনিয়মের দেশে রূপান্তর করতে চায় না।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যা খুশি তা করার সুযোগ দেশের প্রচলিত বিধানে নেই। এরপরও বিধান লঙ্ঘনের সাহস আসে কোথা থেকে? পার পাওয়ার প্রবণতাই অপরাধ প্রবণতাকে উসকে দেয়। একজনের বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘনের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই সমাজে অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়কই হবে না, তরান্বিত হবে উন্নয়ন।
না, একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও ন্যূনতম অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন হোক তা আমরা প্রত্যাশা করি না। জনপ্রতিনিধি জনগণের সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই যখন দায়িত্ব পাওয়ার আশায় প্রার্থনা করেন ভোট তখন জনগণ বড় আশা নিয়েই ভোট দেন। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিকতার বদলে অনিয়মের অভিযোগ আমজনতাকে আহত করে। যদিও অভিযোগ উত্থাপন মানেই দোষী নন, অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেই কেবল তেমন কষ্টের কারণ হয়। যে সমাজে অভিযোগ তুলে তদন্তই আশা করাই অবান্তরের মতো, সেই সমাজে তদন্ত প্রতিবেদনে একজন চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত অনেক কিছু।