কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ নেতা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ঢুকে কর্মরত নারী চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর ভাঙচুর করা হয় চিকিৎসকদের কক্ষ। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান হাসপাতালের দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। তারও গায়ে হাত তোলা হয়। এরপর তার জামা টেনে ধরে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। এসব করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা ও তার অনুসারীরা।
বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছাত্রলীগ নেতা ও তার অনুসারীরা এ তাণ্ডব চালান। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম শাহজামান বিন শহীদ ওরফে অন্তর। তিনি কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার বশির আহমেদ (৬০) শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বেলা দুইটার দিকে তিনি মারা যান। রোগীর কয়েকজন স্বজন অভিযোগ করেন, তারা অক্সিজেন চেয়েও পাননি। এ জন্য তাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ অভিযোগে রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন।
হাসপাতালের নিচতলায় মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষ। সেখানে বসেছিলেন চিকিৎসক ইশরাত হুমায়রা। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, ছয় থেকে আটজন তরুণ কক্ষে প্রবেশ করে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও আপত্তিকর কথা বলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক যুবক আমার ডান হাত মুচড়ে ধরেন। পরে তারা কক্ষের জানালা ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রাশেদুল ইসলাম। রাশেদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কক্ষের ভেতরে থাকা যুবকদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে পারি। কী হয়েছে জানতে চাওয়ায় এক যুবক ছুটে এসে আমার ওপর চড়াও হন। তাদের শান্ত হতে বললে এক যুবক জামা ধরে টান দেন এবং বলেন, তোর মতো পুলিশের চাকরি যেকোনো সময় খেতে পারি। এরপর তিনি শারীরিকভাবে আমাকে লাঞ্ছিত করেন।
রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, কয়েক মিনিটে ভাঙচুরের পর তারা চলে যান। যাওয়ার সময় এক যুবক (অন্তর) পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড ছুড়ে দিয়ে বলেন, এই দ্যাখ, চিনে রাখ, এটা তোর বাপজান।
খবর পেয়ে সেখানে যান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনা সব শোনা হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ সাহেবকে জানানো হয়েছে। তিনি অন্তরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে তাপস কুমার সরকার বলেন, ওই রোগীর বয়স ৬০ বছর। তার মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা নেই।
এদিকে হাসপাতালে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ভিজিটিং কার্ডটি উদ্ধার করা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। অন্তরকে আটকের চেষ্টা চলছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ বলেন, ঘটনা শুনে শাহজামান অন্তরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করবে ছাত্রলীগ।