চুয়াডাঙ্গার ফুরশেদপুর মাঠে তোলা হচ্ছে বালু ॥ হুমকির মুখে আবাদি জমি
দর্শনা অফিস: সরকারি অনুমোদন নিয়ে পুকুর খননের নামে বেগমপুর বিলের কোল ঘেষে ফুরশেদপুর মাঠ থেকে বাণিজ্যিকভাবে বালু তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মুনছুর আলীর বিরুুুদ্ধে। ৩৫-৪০ ফুট গভীর করে পুকুর খননের নামে বালু তোলায় মাঠের আবাদি জমি পড়েছে হুমকির মুখে। প্রতিদিন ১০-১৫টি বালু বোঝাই গাড়ি একই রাস্তায় চলাচলে ক্ষতি হচ্ছে রাস্তার। বিষয়টি তদন্তপূর্বক অনুমোদন বাতিলসহ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা ডেপুটি কালেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) টুকটুক তাকুলদারের নিকট থেকে শর্তসাপেক্ষে পুকুর খননের লিখিত অনুমোদন নেন। অনুমোদনের কপি হাতে পেয়ে মুনছুর আলী পুকুর খননের নামে বেগমপুর বিল সংলগ্ন ২৭নং ফুরশেদপুর মৌজার ৩৯৭ খতিয়ানের ১৫১৬ ও ১৫১৭ নং দাগের জমিতে মাঠে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। উত্তোলনকৃত বালু বাণিজ্যিকভাবে প্রতি ট্রাক্টর ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণত পুকুর খননের ক্ষেত্রে ৮-১০ ফুট গভীর করা যথেষ্ট হলেও মুনছুর আলী ৩৫-৪০ ফুট গভীর করে বালু তুলেছেন। অনেকেই বলেছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত খনন করা হচ্ছে। অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে, পুকুর খননকৃত জমির কোনো মাটি ও বালু বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করতে হলে পুনরায় পূর্বানুমোতি গ্রহণ করতে হবে। পুকুরের চারপাশে ৭ফুট পাড়, ৫ফুট বকচর, ১০ ফুট গভীরতা এবং ১:২ অনুপাতে ঢাল রেখে পুকুর খনন করাসহ ৫টি শর্ত মেনে পুকুর খননের কাজ করতে হবে। উল্লেখিত শর্তের ব্যাত্যয় ঘটলে অনুমতি বাতিল করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সকল শর্তই অগ্রাহ্য করে নিজের খেয়ালখুশি মতো বালু উত্তোলন এবং বিক্রি করছেন মুনছুর আলী। এদিকে পুকুর থেকে ৩৫-৪০ ফুট গভীর করে বালু তুলে পার্শ্ববর্তী সমতল জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পুকুরের গভীরতা বেশি মাত্রায় হওয়ায় আশপাশ এলাকার আবাদি জমি পড়েছে হুমকির মুখে। কারণ ফসলের জমিতে পানি দিয়ে সেচ দিলে সেই পানি দ্রুত পুকুরে নেমে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকেই মোখিকভাবে মুনছুরকে জানালেও তাতে কর্ণপাত না করে তিনি দম্ভের সাথে বলেন, আমার কাছে সরকারি অনুমোদন আছে। তাছাড়া বালুবাহী ট্রাক পাকা ও কাচা রাস্তা দিয়ে বারবার চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। বালু ভর্তি ট্রাক বেপরোয়া চালানোর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে অনেকেই। ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন মুনছুর আলী। এ ব্যাপারে মুনছুর আলী জানান, আমার কাছে বালু উত্তোলনের অনুমতিপত্র আছে। আমি যথাযথ নিয়মে বালু উত্তোলন করছি। বালু বিক্রির ব্যাপারে তিনি বলেন, এত বালু কি করবো বিক্রি না করে? বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ সালের ৬২ নং আইনের ১৫(১) ও (২) এই আইনের ধারা ৪ এ বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করিলে বা এ আইন বা অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদ- বা সর্বনি¤œ ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হইবেন। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এ আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার হইবে।