বখাটে পক্ষের হামলায় ছাত্রীর চাচাসহ আহত ৩

গাংনীর পীরতলায় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদের জের

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীর পীরতলা গ্রামে মাদরাসা ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় বখাটে পক্ষের হামলায় ছাত্রীর পরিবারের তিনজন আহত হয়েছেন। মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপে তিনজনই গুরুতর আহত অবস্থায় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হচ্ছেন- ছাত্রীর ছোট চাচা গোলাম সরওয়ার (৫৪), চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন (১৬) ও প্রতিবেশী চাচা জিয়ারুল ইসলাম (৪০)। ঘটনার পরই আত্মগোপন করেছে শ্লীলতাহানিকারী বখাটে যুবক রাজন ও তার চাচাতো ভাই টুটুলসহ পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে।
অভিযোগে জানা গেছে, পীরতলা গ্রামের ঘাটপাড়ার জামরুল ইসলামের ছেলে বখাটে রাজন হোসেন ও তার চাচাতো ভাই টুটুল মিলে প্রতিবেশী মাদরাসা ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। গতকাল রাতে ওই ছাত্রী বাড়ির উঠোনে টিউবওয়েলে হাত-মুখ ধুতে যায়। এ সময় রাজন তার মুখ চেপে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ছাত্রীর চিৎকারে বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে রাজনকে আটক করে। রাজনের পরিবারে খবর দিয়ে সুবিচার দাবি করেন ছাত্রীর পরিবার। কিন্তু বখাটে ছেলের বিচার না করে উল্টো ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে রাজনের পরিবারের লোকজন। রাজন ও তার চাচাতো ভাই টুটুল, চাচা আমুর ও জামশেদ, আশিকসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালায়। এতে ছাত্রীর চাচা, চাচাতো ভাই ও প্রতিবেশী এক চাচার মাথায় গুরুতর ক্ষত হয়। খবর পেয়ে গ্রামের অন্য লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় গ্রামবাসী।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজন আমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। আমরা গরিব পরিবার তাই প্রভাবশালী রাজনের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছিলাম না। সে আমাকে ভালোবাসার কথা বলে যেখানে সেখানে হাত ধরে টানাটানি করে। আমার কয়েকটি বিয়ের সম্মন্ধ এসেছে কিন্তু রাজন তা ভেঙে দিয়েছে। মান সম্মান নষ্ট হবে ভেবে ও প্রভাবশালী পরিবারের দাপটে আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না। আমার পরিবার থেকে বিষয়টি নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকে। এর মাঝে সে আমার মুখ চেপে ধরে অপহরণের চেষ্টা করেছে। বখাটেসহ হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেছে ওই ছাত্রী ও তার পরিবার।
আহত সূত্রে জানা গেছে, পীরতলা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের সাথে রাজনের চাচা জামশেদ আলীর ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এতে গ্রামে বেশ দাপটের সাথেই চলাফেরা করে রাজনের পরিবার। রাজন ও টুটুল গ্রামের মানুষের কাছে বখাটে হিসেবে পরিচিত। শুধু ওই মাদরাসা ছাত্রীই নয়, পথে ঘাটে অন্য মেয়েদেরকেও উত্ত্যক্ত করে তারা। রশিদ মেম্বার ও জামশেদ আলীর ক্ষমতার দাপটে গ্রামের কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এমনকি পীরতলা গ্রামের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের সাথেও তাদের সখ্য রয়েছে। এ কারণে পুলিশও বখাটেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে গ্রামবাসী মনে করে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিক অভিযান শুরু করেছে। পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে কোনোভাবেই বখাটেরা রেহাই পাবে না। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া হলে তা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Leave a comment