এবারও অর্জন হলো না কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা

আখেরী হুইসেল বাজিয়ে কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুম শেষ

দর্শনা অফিস: বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা এবারও পূরণ হচ্ছে না কেরুজ চিনিকলে। আখ মাড়াই ও রোপণে মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের। লাভের আশায় আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করলেও শেষ অবধি এবারও গুনতে হবে লোকসান। লোকসানের সঠিক অঙ্ক জানতে না পারলেও বরাবরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর খরচ বাঁচাতে খানেকটা শাদামাটা পরিবেশেই কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিলো। চিনিকলকে লাভজনকে রুপ দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছিলো নানামুখি পদক্ষেপ। কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবারও বৃথায় পরিণত হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আখেরী হুইসেল বাজিয়ে ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের ৮৩ মাড়াই দিবসে কেরুজ চিনিকলটি আনুষ্ঠানিক বন্ধ করা হয়েছে। বহু চেষ্টা করেও ২০ ফেব্রুয়ারি আখ মাড়াই বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনেও মাড়াই কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। ফলে মরার ওপর খাড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ছুটির দিনে শ্রমিকদের কাজ করার জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে মিল কর্তৃপক্ষকে। যে কারণে লোকসানের বোঝা বেড়েছে। এ মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশেনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮শ’ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। ৭০ মাড়াই দিবসে চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারিত ছিলো ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু এবারের মরসুমে চিনি আহরণের গড় হার ছিলো ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৭৮ হাজার ৫৩০ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হবে ৪ হাজার ২শ মেট্রিকটন। ফলে নির্ধারিত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৪৭০ মেট্রিকটন আখ মাড়াই কম হলো। চিনি উৎপাদন কম হবে প্রায় ১ হাজার ৬শ মেট্রিকটন। করপোরেশনের কর্তাবাবুরা ৭০ মাড়াই দিবস বেঁধে দিলেও তা ডিঙিয়ে পৌঁছিয়েছে ৮৩ দিবসে। যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে ১৩ দিন। এবারের মরসুমে মাঝেমধ্যে ছোট-খাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পরলেও অন্যান্য বারের মতো বড় ধরনের ত্রুটির কবলে পরতে হয়নি মিলটিকে। চলতি আখ মাড়াই মরসুমের শুরু থেকেই মিলের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার ত্রুটি না থাকলেও লোকসান গোনা থেকে রেহায় পাচ্ছে না। এ দিকে আখ রোপনের ক্ষেত্রে মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে হিড়িক পরে যায়। করপোরেশন থেকে আখচাষে বাধ্যতামূলক ঘোষণা দেয়ায় মিলের সাথে সংশ্লিষ্টরা চাকরি বাঁচাতে পরের জমি লিজ নিয়েও আখচাষ শুরু করে মাজায় গামছা বেধে। অবশেষে সে গুড়েও পড়লো বালু। সব চেষ্টা বিফলে গেলো। রোপন মরসুমের সময়সীমা শেষের দিকে পৌঁছুলে লক্ষ্যমাত্রার ধার কিনারেও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদী ফসলে ক্রমাগত লোকসান ও হয়রানীতে অতিষ্ঠ কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের পাশাপাশি লাঙ্গল কোদাল নিয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারীরাও সুগার করপোরেশনের নির্দেশে ঘুম থেকে উঠে মাঠমুখী ছুটেছেন। ২০১৭-১৮ আখ রোপণ মরসুমে সর্বমোট ১২ হাজার ৫শ’ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬৪৫ একর এবং চাষিদের ১০ হাজার ৮৫৫ একর জমিতে আখ চাষ করা হবে। এ ছাড়া ৯ হাজর ৯শ’ একর নতুন এবং ২ হাজার ৬শ’ একর জমিতে মুড়ি আখ চাষের সিদ্ধান্ত ছিলো চূড়ান্ত। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। চাষিদেরকে আখের জমিতে সার প্রয়োগ, বীজ ক্রয়, কীটনাশক প্রয়োগ, নালাকাটা, আখবাঁধা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ২০১৭-১৮ আখ রোপণ মরসুমের সূচনা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে আখ রোপণ কার্যক্রম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সর্বমোট ৬ হাজার ২শ’ সাড়ে ৭৭ একর জমিতে আখ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমি রয়েছে ১ হাজার ৩১০ একর এবং কৃষকদের জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৯শ’ সাড়ে ৬৭ একর। বর্তমানে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেক রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকি আরও ৭ দিনে বেশ কয়েক একর জমিতে আখ রোপণ হবে বলে জানা গেছে। সাড়ে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করা গেলে সম্প্রতিকালের ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মরসুমে সম্প্রতিকালের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেছিলেন বেশ কয়েকজন আখচাষি। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেছেন, এলাকার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ চিনিকলটি রক্ষা করতে বেশি বেশি আখচাষের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে আখচাষ ও চাষিদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সাথে পূর্জি জটিলতা কাটিয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের সেবা পৌঁছুনো হচ্ছে। ঘরে বসেই আখের মূল্য পেয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। তিনি কৃষকদেরকে বেশি বেশি আখচাষের আহ্বান জানিয়েছেন।