খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে ফাতেমা

স্টাফ রিপোর্টার: আদালতের আদেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখাশোনার জন্য নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির এভাবে কারাগারে থাকার এমন ঘটনাও নজিরবিহীন। দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখাশোনার জন্য ফাতেমাকে রাখার নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা এবং এর পরপরই তাকে কারাগারে নেয়ার পর থেকেই ‘ফাতেমা’কে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিএনপির আইনজীবী ও নেতারা ফাতেমাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাখতে না দেয়ার সমালোচনাও করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে ফাতেমাকে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে কারাগারে রাখা হয়েছে।

সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) শামসুল হায়দার চৌধুরী  বলেন, সাধারণত প্রথম শ্রেণির বন্দি বা ডিভিশন পাওয়া ব্যক্তিদের দেখভালের জন্য সাজা ভোগরত কোনো কয়েদিকে নিয়োজিত করা হয়। নারী বন্দিদের জন্য একজন নারীকে এবং পুরুষ বন্দিদের টুকটাক কাজের জন্য একজন পুরুষ বন্দিকে নিয়োজিত করা হয়। কারাগারে এমনটিই হয়ে থাকে। তবে আদালতের আদেশে যেকোনো কিছু করা যায়। আদালতের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে ঘটনাটিকে তিনি ‘নতুন’ বলে আখ্যা দেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেছেন, এমনকি খালেদা জিয়া তার গৃহকর্মীকেও সঙ্গে নিয়েছেন। যেটা এ দেশে নজিরবিহীন ঘটনা। সাজার রায়ের পর পুলিশের গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে যান ফাতেমা। ওই দিন কয়েক ঘণ্টা তিনি সেখানে ছিলেন। কিন্তু নিয়ম না থাকায় বা ফাতেমা সঙ্গে রাখার ব্যাপারে আদালতের কোনো নির্দেশনা না থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সেখানে রাখতে দেননি। গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইরের কাউকে রাখার নিয়ম না থাকায় ফাতেমা রাখার অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।

দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফাতেমা বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে রয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী ফাতেমা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কাজগুলো করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন তার দৈনন্দিন কাজের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ফাতেমার ওপর নির্ভরশীল। দেশের ভেতর তো বটেই, দেশের বাইরেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি ফাতেমার মমত্ববোধ প্রবল। সবসময় পাশে থাকা, চেয়ারপারসনকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেয়াসহ সবকাজই ফাতেমা করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় চেয়ারপারসনের এই কাজগুলো সঠিকভাবে করার কারণে খালেদা জিয়া এখন তার কাজগুলোর ব্যাপারে ফাতেমার ওপর নির্ভর করেন। এ কারণে দৈনন্দিন কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার জন্য আবেদন করেছেন।

ফাতেমা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকার শাহজাহানপুরে থাকতেন। এখন তার বাবা-মা ও কিশোর বয়সী একমাত্র ছেলে শাহজাহানপুর এলাকাতেই থাকেন। ২০১৫ সালে জানুয়ারি থেকে ৯২ দিন গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের সময় খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন ফাতেমা। ফাতেমার একমাত্র ছেলে ওই সময় মাঝেমধ্যে গুলশান কার্যালয়ে এসে তার সঙ্গে দেখা করে যেতো। তার পরিবারের ব্যাপারে বিএনপির সাবেক দুজন সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা সব খবর রাখেন। মূলত তারাই ফাতেমাকে খালেদা জিয়ার বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠান। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন গুলশানের কার্যালয়ে থেকে খালেদা জিয়াকে বের হতে দেয়া হচ্ছিলো না ওই সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের পেছনে পতাকা হাতে দাড়ানো ফাতেমাকে নিয়ে অনেকেই কৌতূহল দেখান। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকার সময় গুলশান কার্যালয়ে ফাতেমার সঙ্গে কোনো কোনো সাংবাদিকের কথাও হয়েছে। খুবই স্বল্পভাষী ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে তিনি অনেক দেশে গেছেন।