গাংনী উপজেলায় হাটবাজার ইজারার নিলামের দরপত্র উন্মুক্ত

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন হাটবাজার ইজারা নিলাম দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দরপত্র দাখিলের শেষ সময় অতিক্রমের পর বিকেলে ইউএনও সভাকক্ষে বাংলা ১৪২৫ সনের দরপত্র খোলা হয়। তবে বামন্দী হাটের ইজারা প্রক্রিয়ার ওপর উচ্চাদালতের স্থিতাবস্থার নির্দেশ থাকায় দরপত্র প্রক্রিয়া আটকে গেছে। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৩২টি হাটবাজার আগামী বাংলা সনের ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরদাতাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ইজারা প্রদান কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা প্রদান করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
গাড়াবাড়িয়া হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী ইলিয়াছ সবুর দর দিয়েছেন ৩৫ হাজার ৮০০ টাকা। খাসমহল হাটে মেজেরুল ইসলাম দর দিয়েছেন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। শফিকুল ইসলাম দরপত্র দাখিল করলেও সিডি দেননি। মাইলমারী হাটে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন বজলুর রহমান ৮২ হাজার টাকা। মফিজুল ইসলাম দর দেননি এবং জিয়াউল হক দিয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। তেঁতুলবাড়িয়া হাটের একমাত্র দরদাতা শফিকুল ইসলামের দর ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ইয়াছিন আলী সিডি দাখিল করেননি। করমদি হাটে একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী দেলোয়ার হোসেন দর দিয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ১০০ টাকা। ভরাট মাদরাসা হাটেও একমাত্র দরদাতা হিসেবে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা দরপত্র দাখিল করেছেন রফিকুল আলম। হিন্দা হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী আব্দুল মজিদের দর ১৬ হাজার ৫৩০ টাকা। সহড়াতলা হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী শরিফুল ইসলাম দর দিয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৪৭ টাকা। সিন্দুকৌটা হাটে আব্দুর রশিদ ৪২ হাজার ৫৭৫ টাকা ও মোতালেব হোসেন দর দিয়েছেন ৩৩ হাজার টাকা। বাওট হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা জোতি খাতুন। তিনি দর দিয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। অপর দরদাতা মোতালেব হোসেনের দর ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। হোগলবাড়িয়া ক্লাব বাজার ১৫ হাজার ৫৭৫ টাকা, মহাম্মদপুর হাট ৩৬ হাজার টাকা ও কোদাইলকাটি হাট ৭২ হাজার ৬০০ টাকা দর দিয়েছেন আব্দুর রশিদ। হোগলবাড়িয়া ও মহাম্মদপুর হাটে আর কেউ দরপত্র দাখিল করেননি। তবে কোদাইলকাটি হাটের আরেকজন দরদাতা জাফর আলী দর দিয়েছেন ৬১ হাজার ৫০১ টাকা। সাহারবাটি চারচারা হাট রবিউল ইসলাম ২৭ হাজার ৫০০ টাকা ও হিজলবাড়িয়া হাট শফিউল ইসলাম দর দিয়েছেন ২৩ হাজার ২০০ টাকা। এই দুটি হাটে আর কেউ দরপত্র দাখিল করেননি। ভোমরদহ হাট ১৪ হাজার টাকা দর দিয়েছেন একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী সাবান আলী। জোড়পুকুরিয়া হাট সামসুল হকের দর ২ লাখ ২০ হাজার ও ফরমান হোসেনের দর ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ভাটপাড়া হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা ইয়াছিন আলী দর দিয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৮৩ টাকা। আমজাদ হোসেন দরপত্রের সাথে সিডি দাখিল করেননি। রায়পুর হাট একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী হাসান রেজা সেন্টু ২৪ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। এলাঙ্গি হাট হুজুর আলী ৬৫ হাজার ও এনামুল হক ৫১ হাজার দর দিয়েছেন। চাঁদপুর হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী হাসান রেজা সেন্টুর দর ৭ হাজার ৫০০ টাকা। হেমায়েতপুর হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা রাশিদুল ইসলাম ২৩ হাজার ১০০ টাকা। অপর দরপত্র দাখিলকারী আরিফুল ইসলামের দর ১৫ হাজার ৫০০টাকা। মড়কা হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা রাশিদুল ইসলাম ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। আব্দুস সালাম ৭২ হাজার ৩৩০ টাকা ও মনিরুল ইসলাম ৬৪ হাজার ১৩০ টাকা দর দিয়েছেন। তেরাইল হাট জাহাঙ্গীর আলম বাদশা সর্বোচ্চ দরদাতা। তিনি দর দিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। রাজু মিয়া ২০ হাজার ও জিয়ারুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। দেবীপুর হাট সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ টাকা দরদাতা শহিদুল ইসলাম। অপর দরপত্র দাখিলকারী সাবদার আলীর দর ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। রামনগর হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী ইউনুছ আলীর দর ৯২ হাজার ১০০ টাকা। সাহেবনগর হাটের জন্য দুজন দরপত্র দাখিল করেছেন। সর্বোচ্চ দরদাতা আবুল কালাম আজাদের দর ২ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা। রফিকুজ্জামানের দর ২ লাখ ৩ হাজার। ভবানীপুর হাট এনামুল হক ২২ হাজার ৫ টাকা, হাড়াভাঙ্গা সেন্টার হাট রফিকুজ্জামান ৪৩ হাজার ১০০ টাকা, নওদাপাড়া হাট হাফিজুর রহমান ৭৩ হাজার টাকা ও বেতবাড়িয়া হাট ফজলুল হক ৩৫ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। ওই ৪টি হাটে একজন করে দরপত্র দাখিল করেছেন। গাড়াডোব হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫ টাকা। মনিরুল ইসলাম ১ লাখ ৫৯ হাজার ও উজ্জ্বল হোসেন দর দিয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। চিৎলা হাট নয়ন হোসেন ৯২ হাজার টাকা ও আশরাফুল ইসলামের দর ৭৫ হাজার টাকা। ধানখোলা হাট শওকত আলী ১ লাখ ৪০ হাজার ও ইয়াছিন আলীর দর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আড়পাড়া হাট মোতালেব হোসেন ১ লাখ ২ হাজার ও মজনু মিয়ার দর ৮০ হাজার টাকা। জুগিন্দা হাটের একমাত্র দরপত্র দাখিলকারী আব্দুল করিম দর দিয়েছেন ১১ হাজার ১০০ টাকা।
দরপত্র উন্মুক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পালসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন গাংনী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নবীর উদ্দীন, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ ও কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ দরপত্রে অংশ গ্রহণকারীবৃন্দ। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট হাটের সংখ্যা ৪৫টি। এর মধ্যে ৩২ হাটের দরপত্র নিলামে অংশ নিয়েছেন আগ্রহী দরদাতাবৃন্দ। বামন্দী হাটের দরপত্রের ওপর আদালতের স্থিতাবস্থা ও বাকি ১২টি হাটের কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। দরপত্র জমা না পড়া হাটগুলো নিলামের জন্য পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হবে। বামন্দী হাটের বিষয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে হাট দরপত্র নিলাম গ্রহণ করেন মিরপুরের কামাল হোসেন। হাটে তার লোকসান হচ্ছে মর্মে সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি নায়মা হায়দার এবং জাফর আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বামন্দী-নিশিপুর (পশু হাটসহ) হাটের ইজারা কার্যক্রমের বিষয়ে ৪ (চার) সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা (ঝঞঅঞটঝ-ছটঙ) আদেশ প্রদান করেন। এ বিষয়ে ইজারা নিলাম কমিটি ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বামন্দী-নিশিপুর হাট ইজারা গ্রহণের জন্য গাংনীর আনারুল ইসলাম বাবু, নবীর উদ্দীন, মিনাপাড়ার সিরাজুল ইসলাম, বামন্দীর আমিরুল ইসলাম শেখ ও হোগলবাড়িয়ার মনিরুজ্জামান আতু দরপত্র দাখিল করেন। কিন্তু আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের প্রেক্ষিতে দরপত্রগুলো খোলা হয়নি। খামবদ্ধ অবস্থায় সিলগালা করে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বামন্দী-নিশিপুর হাট এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পশু হাট। এ হাট থেকে প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে প্রায় ১ কোটি টাকা রাজস্ব জমা হয়।