চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ তথা বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় একসময় অসংখ্য মানুষ অনহারের কষ্টে দিন কাটাতো। সেই কষ্ট দূর করতে যেমন সহায়ক হয়েছে মাথাভাঙ্গা, তেমনই গঙ্গা-কপোতাক্ষ বা জিকে সেচ প্রকল্পও পাল্টে দিয়েছে প্রান্তিক কৃষককূলের ভাগ্য। কীভাবে? সুলভে সেচ একই জমিতে তিনবার ধানের আবাদ করার যেমন সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনই মাথাভাঙ্গার তীর ঘেষে গড়ে তোলা পানবরজ বিতাড়িত করেছে অভাব। যার সামান্য জমি আছে সে পানবরজ নিয়ে সংসারে এনেছে স্বচ্ছ্বলতার হাসি, যার জমি নেই সেও অন্যের পানবরজে বা ক্ষেত খামারে কাজ করে আর যাই হোক অনাহারের কষ্ট থেকে রেহায় পেয়েছে। অথচ এসব আবাদে এখনো আধুনিকতার তেমন ছোঁয়া লাগেনি বলেই বার বার নতুন নতুন রোগে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু এলাকার পানচাষিদের করুণদশা পুরো এলাকায় পানের আবাদের ওপরই বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা স্পষ্ট।
পানের আবাদ বা পানবরজ মূলত বংশ পরমপরায় করে আসছেন এলাকার পানচাষিরা। মাটিরগুণেই হোক, আর ভৌগলিক কারণে অনুকূল আবহাওয়ার কারণেই হোক, এলাকার পানের কদর দেশের সর্বত্র। দেশের বাইরেও রপ্তানির পরিমানে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার পানই এগিয়ে। অথচ এই পানের আবাদ বা পান বরজ মূলত বংশপরমপরায় দেখে দেখে করে আসছেন পানচাষিরা। পানের আবাদের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে ভুট্টোর আবাদও এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী অবদান রেখে চলেছে। ভুট্টার আবাদে জমির উর্বরতা নিয়ে যতোটা প্রশ্ন পানবরজে তার উল্টো। কারণ, পান বরজে খৈল মাটি আর সেচের সাথে সাথে পচাপানসহ সন-খড়কুটোও মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। পানের আবাদে ফি বছর নতুন নতুন রোগবালাই থেকে পান রক্ষা করতে পারলে এলাকার দৃশ্যপট আরও পাল্টাতে বাধ্য। আর প্রবাসে শ্রম বিকোনো? দেশের অন্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও খাটো আবাদ খাড়া করেছে শিরদাঁড়া।
উন্নয়ন তালিকায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের নাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে নিচে। কর্মসংস্থান গড়ে তোলার মতো আগ্রহী বিনিয়োগকারীর যেমন অভাব, তেমনই তাদের আগ্রহী করে এলাকায় শিল্প কলকারখানা নির্মাণের পরিবেশ গড়ে দেয়ার মতো উদ্যোগীরও ঘাটতি যথেষ্ঠ। এরপরও এলাকায় মাটির ঘর নেই, ঘরে ঘরে বাইকের সমাহার। স্বচ্ছ্বলতার হাসি যেন প্রতিটি গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়। এই স্বচ্ছ্বলতা, এই স্বস্তির সুবাতাস আরও স্বাস্থ্যবান করে তুলতে হলে দরকার আবাদে আধুনিকায়ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আবাদ বিপর্যয়ের আড়ালে মাত্রারিক্ত সার কীটনাশকের প্রয়োগ। এটা কি সচেতনতায় ঘাটতিরই খেসারত নয়? এছাড়াও এমন কিছু কারণ থাকে যার ফলে ফলন বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। ওই কারণ শনাক্তে গবেষণাগার গড়ে তোলার পাশাপাশি যদি চাষিদের আধুনিক চাষাবাদে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা হলে স্বনির্ভরতার ভিত মজবুত হতে বাধ্য।