যার সকল চেষ্টা ব্যর্থ তার দায়িত্বে থাকার দরকার কী

অনিয়ম রোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার পরও যদি ব্যর্থ হতে হয়, তা হলে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ব্যর্থতার দায় ঘাড়ে নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো কি উচিত নয়? উচিত অনুচিত নিয়ে তর্ক অমূলক নয়, তাই বলে প্রায় প্রতিবছর একই ক্ষেত্রে তথা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ব্যর্থতার দায় এড়াতে চরম সত্যকে মিথ্যার আবরণে আড়ালের চেষ্টা জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এটা স্বল্পবুদ্ধির সরল মানুষ বোঝে। না বুঝে আমরা দায়িত্বপ্রাপ্তরা শুধু দায় এড়ানোর যুক্তি খুঁজি, খুঁজি অজুহাত।
প্রশ্নপত্র ফাঁস কারা করে? একবার ঢালাওভাবে শিক্ষকদের ওপর দোষ চাপানো হলো। অবশ্য পরবর্তীতে ঢালও দোষ না দিয়ে বলা হয় কোনো কোনো শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত। ফলে শিক্ষক সমাজে কিছুটা হলেও মর্যাদা রক্ষা বা হেয়প্রতিপন্ন থেকে রক্ষার প্রয়াস চললো। বলা হলো, ওই কোচিং সেন্টার, কোচিং থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই কোচিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হচ্ছে ছায়াকপি বা ফটোস্ট্যাটের দোকানও। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে বলে খবর পাওয়ার সাথে সাথে কিছু ব্যক্তির চাকরিচ্যুত করা হলো। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশে বাধ্যবাধকতা করা হলো। এরপরও কি প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো গেছে? প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে না পারা মানে কমলমতি শিক্ষার্থীদের সফেদ মানসপটে অনিয়মের দাগ লেপন। এটা মুছবে কীভাবে? পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএসসি’র প্রথম পরীক্ষার ‘বাংলা প্রথমপত্র’ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। আর ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এই পরীক্ষা। এভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ, বিরক্ত এবং শঙ্কিত। শনিবারের পরীক্ষা শুরু পৌনে ১ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে তা ফেসবুকে চলে আসে। প্রশ্নপত্রটি ওই গ্রুপে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অনেক গ্র্রুপ ও পেজে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যাবে তা বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বিজ্ঞাপন আকারে দেয়া হয়েছিলো। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে প্রশ্ন পেতে হলে এই গ্রুপটিকে লাইক দিন। বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনী) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে বলে যে অভিযোগ তা অস্বীকার করবেন কীভাবে? শুধু প্রশ্ন নয়, উত্তরসহ সেট বহুনির্বাচনি প্রশ্ন এসব গ্রুপে ফাঁস করা হলে তা ভাইরালও হয়ে যায়। এছাড়া ফেসবুক মেসেঞ্জারে সকাল ৯টা ১৬তে ‘হিমুর ছায়া’ নামের একটি আইডি থেকেও উত্তরসহ প্রশ্ন ইমেজ আকারে পাঠানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩২ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্তব্যরত কতিপয় অসাধু শিক্ষক প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে ফাঁসকারী চক্রের কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল হবে। কিন্তু এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি-না তার প্রমাণ খোঁজেনি মন্ত্রণালয়। আর পরীক্ষা বাতিলের ঘটনাও ঘটেনি। আর প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে শিক্ষামন্ত্রণালয় ফেসবুক বন্ধের প্রস্তাব দিলেও যৌক্তিকতা বিবেচনা না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এ ব্যর্থতার দায় শিক্ষাথীরা নেবে কেন?