জনগুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিষয়টি বারবার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার পরও তা অবজ্ঞা করে ঠিকাদারের ইচ্ছেমতো স্থানে কাজ করাটাকে ঠিক কী বলা যায়? অতোশত বুঝি না, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনাসহ যে কার্যাদেশ পেয়েছি সেভাবে করলেই কার কী? চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কটির সম্প্রসারণ ও মেরামতের কাজ আগেভাগে সম্পন্ন করার প্রশাসনিক তাগিদের পরও কাজের গতি ও স্থান নির্ধারণের ধরন দেখে সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোরই শামিল নয়কি? এটা কাম্য নয়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার শহরের বিভিন্ন সড়কের ধারে পয়ঃনিষ্কাশন নালা নির্মাণের কাজ চলছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা-কোর্ট রোডের কেদারগঞ্জ অংশে মাটিখুঁড়ে সড়কের পাশে ফেলে রেখে কাজ করা হচ্ছে কচ্ছপগতিতে। ফলে ধূলোর বহর বেড়েই চলেছে। ধূলো নিবৃত্ত করার জন্য পানি না দেয়ার অপর নাম পথচারীসহ পৌরনাগরিকদের থোড়ায় কেয়ার। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর থেকে বাস-টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা। সড়কের মাঝে পৃথকীকরণ পাঁচিল দেয়ার পর থেকেই সড়কের করুণ চিত্র ফুটে উঠতে থাকে। যেহেতু সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাভুক্ত, সেহেতু দীর্ঘদিন ধরে নামকাওয়াস্তে খানাখন্দ ভরাটের নামে বার্ষিক বিশেষ বরাদ্দ খরচ চিরকুটের মধ্যেই হজম হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঝিনাইদহ-চুয়ডাঙ্গা সড়কের চুয়াডাঙ্গার সুবদিয়া ও চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের চুয়াডাঙ্গার কুলপালা পর্যন্ত ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার ৯৬১ টাকা ব্যয়ে সড়কটি প্রশস্তকরণসহ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে গত বছরের জুনে। চলতি বছরের জুনে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। সড়কের কিছু অংশে কাজ শুরু হলেও সর্বাধিক খারাপ তথা চলাচলের অনুপোযোগী অংশে অর্থাৎ জেলা শহরের প্রধান সড়ক শহীদ আবুল কাশেম সড়কটিতে প্রথমে হাতই দিতে চাননি নিযুক্ত ঠিকাদার। যতো দূর জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কয়েক মাস আগে ঠিকাদার ও সওজ বিভাগের পদস্থ কর্তার সাথে আলোচনা করে শহরবাসীসহ পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। ঠিকাদারের লোকজন শহরের ভেতরের কিছু অংশ খুড়ে পিচ উদরে, কিছু অংশে নামকাওয়াস্তে খোয়া দিয়ে সমান করে দায় সারে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিই শুধু বাড়েনি, ভয়াবহ আকারে ধূলো সৃষ্টি হয়ে পথাচারীদের শ্বাসকষ্টের রোগী করে তুলছে। একের পর এক দুর্ঘটনা শঙ্কিত করে তুলছে সকলকে। পরিস্থিতি অবলকনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করে নিযুক্ত ঠিকাদার মেহেরপুরের মেসার্স জহুরুল লিমিটেডকে তড়িৎ শহরের ভেতরের অংশে কাজ করার তাগিদ দেন। তিন দিন আগে এ তাগিদ দেয়ার পর রেলবাজার অংশে রুলার রেখে কিছু লোকবল দিয়ে ঝাড়– দেয়া হলেও পরদিন পূর্বের অবস্থাতেই ফিরে যেতে দেখা যায়। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ধূলো আর ধূলো। দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনা। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘ধূলোর শহর চুয়াডাঙ্গায় মাইক্রোর ওপর উল্টে পড়লো ট্রাক’ দুর্ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এমনিতেই এবার বর্ষায় বৃষ্টির কারণে সড়কের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি যদি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়ক শহীদ আবুল কাশেম সড়কের কাজও সম্পন্ন করে দেয়া হবে। অতো তাড়াতাড়ি করলে তো হবে না! এটা তিনি বললেও এর মধ্যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনকে কি অবজ্ঞা করা হলো না? তাছাড়া চুয়াডাঙ্গার শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের তাগিদ না মানা মর্যাদার ওপর আঘাত বটে।