চুয়াডাঙ্গায় চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা : টুটুলসহ তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে রাহাজ্জান টুটুলসহ তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতারণার শিকার এক যুবক বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার কাশেমপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে রাহাজ্জান টুটুল(২৩), একই জেলার ঝিকরগাছা থানার কাইকুলা গ্রামের রবিউলের ছেলে রাশেদুজ্জামান, একই থানার কাইমখোলা গ্রামের রিয়াজুল। এই তিন প্রতারকই একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। তাদের প্রতারণা করা নেশা ও পেশা। তারা চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার কেদারগঞ্জের সিমা ভবনের ৩য় তলায় প্রাটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্স লিমিটেড জীবন বীমা নামে কোম্পানির কাজ চালানোর জন্য অফিস ভাড়া নেয়। একই সাথে তিন প্রতারক চুয়াডাঙ্গায় ডিস ক্যাবলের ম্যাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ২ জন, ইউনিট ম্যানেজার ১৯জন, ফিল্ড অফিসার ৪০ জন, রিসিভশনে ১ জন, অফিস সহকারী ১ জন। ডিস ক্যাবলে বিজ্ঞপ্তি দেখে বাদী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বন্দরভিটা গ্রামের বাবুল আক্তারের ছেলে আহসান হাবীব গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওই অফিসে যায়। ওই দিন অফিসে গেলে রাজ্জান টুটুল নিজেকে প্রাটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্স লিমিটেড জীবন বীমার এমডি পরিচয় দিয়ে বলে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে ১০ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সাথে সে জানায়, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিঙ হবে এবং ১৫ দিনের বেতন দেয়া হবে। সিকিউরিটি হিসেবে ১২ হাজার টাকা জমা রাখে। একই কায়দায় ১৭ জন ইউনিট ম্যানেজার গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আশিকুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, নিতাই দাস, আশরাফুল, উম্মে রুম্মান, শাহনাজ, জেসমিন আক্তার, শারমিন আক্তার, মিন্টু মিয়া, রুমানা আক্তর, স্বর্ণা খাতুন, আহনাব শাহরিয়ার, হুমায়ুন আজাদ, শিরিনা, তরিকুল ইসলাম, জোসনা রানি, আফসানা মিমদের নিকট থেকে ১২ হাজার টাকা করে মোট ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। ১৩ জন ফিল্ড অফিসারের নিকট থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ৯১ হাজার টাকা নেয়। যথাক্রমে টাকা দেয়া ফিল্ড অফিসার ইলিয়াস, সাব্বির আহমেদ, রাবেয়া খাতুন, আল্পনা নিশি খাতুন, বিপ্লব, রিক্তা, শাহানাজ, লাবনী, রজব, শাহারিয়ার, আব্দুল হাকিম, কুলসুম, আয়েশা। রিসিভশনে মোবাইয়া ইসলামের নিকট থেকে ৭ হাজার টাকা ও অফিস সহকারী বাহাদুর দাসের নিকট থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়। ব্রাঞ্জ ম্যানেজার বাবুলের নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। মোট নগদ প্রতারণা করে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। একই সাথে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রেনিং করায়। পরে আশপাশ জেলাসহ ঢাকাতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই প্রতিষ্ঠানটি ভূয়া এবং আমাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জে যাশোরের রাহাজ্জান টুটুল প্রোটক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্স লিমিটেড জীবন বীমা নামে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ দেয়। একই সাথে নিয়োগকৃতদের নিকট থেকে জামানতের টাকা নিয়ে আতœসাত করে। এরই মধ্যে নিয়োগকৃতরা জানতে পারে কোম্পানিটি ভূয়া। এরপর টাকা দাবী করার এক পর্যায়ে দিতে রজি হলেও যশোর থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে প্রতারণার শিকার তরুণ-তরুনীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। পরবর্তীতে যশোর পুলিশের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ প্রতারককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে প্রতারণার শিকার এক তরুণ আহসান হাবীব মামলা করেন। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে ফিল্ড অফিসার পদে ৬ হাজার, ইউনিট ম্যানেজার পদে ১০ হাজার, ম্যানেজার পদে ১৩ হাজারসহ রিসিপশন ও অফিস সহকারী পদে ভালো বেতনের কথা উল্লেখ করা হয়। চাকরির জন্য আবেদন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বেশ কিছু ছেলেমেয়ে। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রোটেক্টিভের সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোর কোতোয়ালী থানার কাশেমপুরের রাহাজ্জান টুটুল, পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের এনামুল হক, আবুবকর ছিদ্দিক, একই জেলার সাবদারপুরের মফিজউদ্দিন, কাশেমপুরের ইমরান খান ৩৫ জনকে নিয়োগ দেন। এ সময় ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ৭ হাজার, ইউনিট ম্যানেজারের কাছ থেকে ১২ হাজার, ম্যানেজারের কাছ থেকে ১৫ হাজার, রিসিপশনের কাছ থেকে ৭ হাজার ও অফিস সহকারীদের কাছ থেকে ৭ হাজার করে টাকা নেন তারা। এছাড়াও প্রত্যেকের কাছ থেকে আইডিকার্ড বাবদ সাড়ে ৭শ টাকাসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে শুরু করে ১৫ দিনের ট্রেনিং। ট্রেনিঙে অর্ধেক মাসের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে শুরু করে টালবাহানা।
এছাড়াও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিট ম্যানেজার পদে ৮জনের স্থানে নিয়োগ দেয়া হয় ২৩ জনকে। এতেই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করে। নিয়োগপ্রাপ্ত এক কলেজ ছাত্রের সন্দেহ তীব্র হওয়ায় প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেডের ওয়েব সাইট থেকে ঢুকে তথ্য নিয়ে জানতে পারে চুয়াডাঙ্গায় এই কোম্পানির কোনো শাখা নেই। এরপরই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ের মাঝে। একপর্যায়ে গত সোমবার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা রাহাজ্জান টুটুলের কাছে গিয়ে টাকা ফেরত চায়। এ সময় টুটুল প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। তার পরিবারের লোকজনও টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি প্রশাসনকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন তারা। টাকা না দেয়া পযর্ন্ত অফিসেই টুটুলের কাছে অবস্থান নেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। ওইদিন রাতেই অফিসের দরজা নক করেন একদল যুবক। এসময় তারা নিজেদেরকে যশোর থানার পুলিশ পরিচয় দেয়। দরজা খুললে অফিসে অবস্থানকারীদের মারধর করে টুটুলকে নিয়ে যায়। পরদিন গত পরশু মঙ্গলবার আহত কর্মচারীসহ সকলে টাকা ফেরতের আশায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের দারস্ত হন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের পুলিশ সুপারের নিকট পাঠান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বিষয়টি শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এক পর্যায়ে যাশোর জেলার কাশিমপুর গ্রামের মন্টু মোল্লার ছেলে রাহাজ্জান টুটুলকে গত পরশু মঙ্গলবার রাতেই যশোর কোতায়ালী থানা পুলিশ আটক করে। এই খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গতকাল বুধবার তাকে চুয়াডাঙ্গা থানায় নিয়ে আটক করে রেখেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানান, আজ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।