প্রকৃত দোষীরাই পাক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

একটি খুনের বা নৃশংস কোনো ঘটনাকে প্রতিপক্ষকে গুষ্ঠিশুদ্ধ ঘায়েল করার সুযোগ হিসেবে না নিয়ে, প্রকৃত দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণই সঠিক সিদ্ধান্ত। অন্যথায় নির্দোষ মানুষের শুধু হয়রানিই হতে হয় না, প্রকৃত দোষীদের কেউ কেউ পার পাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক পক্ষের প্রকাশ্যে নৃশংসতা এলাকার অবাল বৃদ্ধ বণিতাকেই শুধু শঙ্কিত করেনি, মূল অভিযুক্তের বিষয়ে পুলিশের রহস্যজনক নমনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ প্রশ্ন অমূলক নয়। তবে দোষীরা কি এবারও অর্থের বিনিময়ে পার পেয়ে যাবে? এ প্রশ্নও খাটো করে দেখা যায় না।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে টেনেটুনে ৪ কিলোমিটার দূরে গাড়াবাড়িয়া গ্রাম। এ গ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবারের কয়েক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। ওই পরিবারের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ-ি পার না হওয়া একজন একটি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িতই শুধু নয়, তিনি গ্রামে এক আতঙ্কিত ব্যক্তি। স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচনও করেছেন। কিছু ভোটার তার পক্ষে রায়ও দিয়েছেন। যারা ভোট দিয়েছেন তারা কীভেবে ভোট দিয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব না হলেও ওর ভবিষ্যতকে সুন্দর করতেই হয়তো সুধরে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। যেমন বিগড়ে যাওয়া বা বিপথগামী ছেলেকে সুপথে রাখেতে কিছু অভিভাবক আছেন যারা বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওরকম অভিভাবকের ধারণা, ছেলে বিয়ে দিয়ে বউয়ের পাল্লায় ফেলতে পারলেই তথা সংসারে মনোনিবেশ করতে পারলেই কেল্লাফতে। বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে তা হলেও সর্বক্ষেত্রেই কি এই ফরমলা প্রযোজ্য? অবশ্যই না। ইকরামুল হক ইকরা নামের ওই ব্যক্তির ধারাবাহিক অপরাধমূলক অপকর্ম সত্যিই আতঙ্কেরই কারণ। সেসহ তার সাথে যারা থেকে বা সাহস জুগিয়েছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নেয়া দরকার। দরকার বিচারের মুখোমুখি করা। যারা প্রকৃত দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে অভিন্ন নৃশংস হত্যাকা-ের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
অবশ্যই একজনের একটি অপরাধমূলক ঘটনার সাথে সাথে তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে অপরাধের প্রবণতা তার মধ্যে পেয়ে বসা অমূলক নয়। প্রত্যেকের মধ্যেই প্রথম অপরাধ বা বুঝে না বুঝে অন্যায়কে সুধরে নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। সুধরোনোর উপায় কী? অপরাধের মাত্রা বুঝে তার শাস্তির পরিমাণ সম্পর্কে অবগত করিয়ে একটি সুযোগ দেয়া। আমাদের সমাজে এই সুযোগের প্রবণতা যেমন নেই, তেমনই একজন একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলেও নানাভাবে পার পাওয়ার সুযোগ বিদ্যমান। এ থেকে বের হতে না পারলে গ্রামে গ্রামে ইকরা আবির্ভাব হওয়াটাই স্বাভাবিক। যারা অন্যায় করে, যারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তাদের কেউই কি কম অপরাধী? অবশ্যই না। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার কিছু ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তৈরি হয়। চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়া গ্রামের একটি পরিবারের পূর্ব পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি কাউকে টাকা দিলে জমির দলির রেখে দিতেন। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে না পারলে ওইে জমির মালিক হয়ে যেতেন ওই ব্যক্তি। এরকম কিছু জমি বিধি মোতাবেক রেজিস্ট্রি হয়েছে, কিছু জমি মুখে মুখে রেজিস্ট্রির কারণে ঋণ দাতার দখলে চলে গেছে। ওই দখলদার প্রয়াত হলে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির কর্তৃত্ব গ্রহণকারীদের কেউ যদি হিং¯্র হয়ে জমির প্রকৃত মালিককে দমিয়ে রাখতে চান, তা হলে এই অধুনা মানবে কেন? মানছে না বলেই কি বিরোধ?
চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপালনকারীর বিচক্ষণতা এবং তার কর্মতৎপরতায় স্বচ্ছতা জেলাবাসীর ন্যায়পরায়নতায় উদ্বুদ্ধ করতে বাধ্য। একইভাবে মাদকসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিবেদিত প্রাণপুরুষ হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজেকে পরিচিতি করে তুলেছেন পুলিশ সুপার। ফলে দায়িত্বশীল দুজনের ওপরই বেড়েছে পাওয়ার আশা। পাওয়াটা কি? ন্যায়। আইনের দৃষ্টিতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেলে সমাজ সুন্দর হতে বাধ্য। গাড়াবাড়িয়ার একজন কৃষককে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনাকে সামনে নিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। হোক এজাহার ভুক্ত। প্রকৃতি দোষীকে রেখে বাকিদের হয়রানি থেকে রেহায় দেয়াটাও পুলিশের কর্তব্য পরায়নতারই অংশ।